জি কে শামীম ও সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া বিতর্কিত ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীর অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। গতকাল দুপুরে অস্ত্র আইনের মামলায় রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম। রায়ের মধ্য দিয়ে গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার রায় হলো। তার বিরুদ্ধে মাদক মানি লন্ডারিং আইনের মামলা চলমান রয়েছে।

অস্ত্র আইনের মামলায় দণ্ডিত অন্যরা হলেন জি কে শামীমের দেহরক্ষী দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন আমিনুল ইসলাম। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলায় তাদের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২৮ আগস্ট বিচারক রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দেন। রায় ঘোষণার পর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জি কে শামীমের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি বলেন, আমার মক্কেলের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে সে ধারায় সাজা হয়নি। আমাকে তো চার্জ অল্টারের বিষয় জানানো হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন জি কে শামীম। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে নগদ প্রায় কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র মদ পাওয়ার কথা অভিযান শেষে জানায় র্যাব। তখনই শামীম তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় তিনটি মামলা করে র্যাব। এর মধ্যে অস্ত্র মুদ্রা পাচার মামলায় সবাইকে আসামি করা হলেও মাদক আইনের মামলায় শুধু শামীমকে আসামি করা হয়। প্রত্যেক মামলাতেই তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর অস্ত্র আইনের মামলায় শামীম তার দেহরক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব--এর উপপরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক। সেখানে বলা হয়, জি কে শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক জুয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তার অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও তিনি শর্ত ভঙ্গ করে তা অবৈধ কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। তার দেহরক্ষীদের উচ্চ বেতনভোগী দুষ্কর্মের সহযোগী হিসেবে বর্ণনা করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র বহন প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্ন বড় টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল গরুর হাটবাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।

র্যাবের অভিযানে জিকে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর তার প্রতিষ্ঠানের নামে চলা বড় প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিপাকে পড়ে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে জিকে বিল্ডার্সের একক যৌথ নামে থাকা ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এমনকি নানা বিতর্কে জড়িয়ে থাকা শামীমের অনুসারীরা তাদের অবস্থান ধরে রাখতে বিভিন্ন মহলের দ্বারস্থ হয়েও ব্যর্থ হন। বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো হলো ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, সচিবালয়ে ২০তলা ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বাসভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক সুইট ডরমিটরি নির্মাণ, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাকের বিভিন্ন উন্নয়ন স্টিল ব্রিজ নির্মাণ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল নির্মাণ, আজিমপুর ২০তলা ভবন নির্মাণ, শেরেবাংলা নগরে নিটোর নির্মাণ, আশকোনা র্যাব সদর দপ্তর কমপ্লেক্স নির্মাণ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স প্রকল্প, আগারগাঁও জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ, এনজিও ফাউন্ডেশন ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক প্লাজা এমপি থিয়েটার এবং মহাখালী ইজতেমা সেন্টার নির্মাণ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন