ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১০ সদস্যকে ‘উপহার’ হিসেবে দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে উৎপাদিত নকিয়া ব্র্যান্ডের সেলফোন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের ১৪ হাজার টাকা দামের এই হ্যান্ডসেট দেয়া হয়েছে বলে সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওই কার্যবিবরণী অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটির আগের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য অপরাজিতা হক এমপি বণিক বার্তাকে বলেন, সংসদীয় কমিটির ১০ সদস্যকে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কে উৎপাদিত মোবাইল ফোনসেট উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে।
কমিটির আগের বৈঠকে কমিটির সদস্য নুরুল আমিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের আওতায় সেলফোন ও ল্যাপটপ তৈরি করা হয়ে থাকে। কমিটির সদস্যদের সেলফোন সেট প্রদানের আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সেট তৈরি হয় কিনা এবং এর গুণগতমান সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন।
পরে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মো. নুরুল আমিন টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) উৎপাদিত ল্যাপটপ এবং স্মার্টফোন ন্যায্যমূল্যে কিনতে চেয়েছেন। হাই-টেক পার্কে নকিয়া সেট উৎপাদিত হচ্ছে। নকিয়ার উৎপাদিত ১৪ হাজার টাকা মূল্যের সেটটি খুবই ভালো ও সুন্দর। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে উৎপাদিত নকিয়া সেটটি কিনে উপহার হিসেবে কমিটির সব সদস্যকে দেয়া হবে। তারা তা গ্রহণ করলে তিনি বাধিত হবেন মর্মে উল্লেখ করেন।
এরপর ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫টি সেলফোন কোম্পানি সেট উৎপাদন করে। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ দেশীয় গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা হয় এবং এ সেট রফতানিও করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ল্যাপটপ উৎপাদিত হচ্ছে।
তিনি এ প্রসঙ্গে টেশিস স্থাপিত হওয়ার কারণ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, কমিটির সদস্যদের চাহিদানুযায়ী ন্যূনতম মূল্যে মোবাইল সেট ও ল্যাপটপ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরে কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে উৎপাদিত নকিয়া সেট কিনে সব সদস্যকে উপহার হিসেবে দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকালের বৈঠকে তাদের উপহার হিসেবে এ ফোন দেয়া হয়।
রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মো. নুরুল আমিন, মনিরা সুলতানা ও অপরাজিতা হক বৈঠকে অংশ নেন।
এদিকে টেশিসের ‘দোয়েল’ ল্যাপটপ উৎপাদন প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোয়েল প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। সেই গর্বের জায়গাটি নষ্ট করা হলো, বিব্রত করা হলো। এর জন্য কে দায়ী তা সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।
পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তার সঙ্গে একমত পোষণ করে সচিবকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। মোস্তাফা জব্বার বলেন, দোয়েলের প্রথম চালান থেকে শুরু করে প্রকল্পের সব ব্যর্থতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। টেশিসকে ডিজিটাল ডিভাইস কারখানা হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে একটি সার্ভে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে টেশিস সাশ্রয়ী ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ দোয়েল তৈরি শুরু হয়। জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দেশে তৈরি ল্যাপটপ সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে দোয়েলের উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু কিছু ল্যাপটপ তৈরির পর সেগুলোর মান নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। পরে প্রকল্পটি সফলতার মুখ দেখেনি।
