জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে জাতিসংঘ ও উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। এক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে চলছে নানা প্রচার প্রচারণা। কিন্তু বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখনো বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। যদিও জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে এরই মধ্যে বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে, যা শিল্প উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত বিপর্যয় ডেকে আনতে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
সম্প্রতি আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আল জাবের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, জ্বালানি সরবরাহে আসন্ন প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবেলায় জ্বালানি তেল উত্তোলকরা প্রস্তুত নয়। বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত সক্ষমতা বৈশ্বিক চাহিদার চেয়ে ২ শতাংশেরও কম। অর্থাৎ উত্তোলক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা অব্যাহত কমছে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনেই কৌশলই খুব বেশি ফলপ্রসূ হবে না। পরিস্থিতি বিপর্যয়ের দিকেই এগোচ্ছে।
২০২০ সালে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়। এসব পণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। ফলে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কয়েক দশকের সর্বোচ্চে উন্নীত হয়। জ্বালানি পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুদ থেকে রেকর্ড পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতি আরো নেতিবাচক দিকে মোড় নেয়। মজুদ ও সরবরাহ ঝুঁকি প্রকট আকার ধারণ করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। একদিকে উত্তোলন, পরিশোধন ও পরিবহনে যেমন বিনিয়োগ প্রয়োজন, ঠিক তেমনি কার্বন নিঃসরণ কমাতে শিল্প উৎপাদন, অবকাঠামো নির্মাণ ও কৃষিসহ জ্বালানিনির্ভর খাতগুলোয় প্রযুক্তি ব্যবহারেও বিপুল বিনিয়োগ জরুরি। বিনিয়োগ খাতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণে যথাযথ নীতিমালা, কর প্রণোদনা এবং অতিরিক্ত সরকারি তহবিলও প্রয়োজন।
তথ্য বলছে, প্রতি মাসেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়াচ্ছে রফতানিকারক দেশগুলোর মিত্র জোট ওপেক প্লাস। কিন্তু উত্তোলন বাড়লেও জোটটি প্রতি মাসেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ব্যর্থতার পেছনে বিনিয়োগস্বল্পতাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।
রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্য দেশ নাইজেরিয়ায় সম্প্রতি জ্বালানি তেল উত্তোলন তলানিতে নেমেছে। মূলত বিনিয়োগস্বল্পতা ও পাইপলাইন থেকে চুরির কারণে দেশটি উত্তোলন বাড়াতে পারছে না, পূরণ করতে পারছে না জোটের বেঁধে দেয়া কোটাও। একই পরিস্থিতি লিবিয়ার উত্তোলন খাতেও।
একটি সূত্র জানায়, উপকরণ ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির কারণে জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে উত্তোলকদের লাভের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে তারা তাদের বাজেটের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারে। এজন্যই দামের ঊর্ধ্বমুখী সীমা ধরে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ওপেকের নেতারা। এক্ষেত্রে তারা ব্যারেলে ১০০ ডলারকে আর্দশ দাম হিসেবে দেখছেন।
এদিকে দাম বাড়ানোর পাশাপাশি উত্তোলন বৃদ্ধির পরিমাণও কমিয়ে এনেছে ওপেক প্লাস। আগে প্রতি মাসে প্রায় দৈনিক চার-ছয় লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন বাড়ালেও বর্তমানে তা কমিয়ে এক লাখ ব্যারেলে নামিয়ে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উদ্বৃত্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ওপেক প্লাস। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উদ্বৃত্ত দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলে নেমে আসবে। এর আগের প্রাক্কলনে দৈনিক ১৪ লাখ ব্যারেল উদ্বৃত্তের কথা জানিয়েছিল ওপেক প্লাস। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত কমবে দৈনিক চার লাখ ব্যারেল করে।