হর্ন অব আফ্রিকায় খরা

স্কুল থেকে ঝরে পড়তে পারে ৩৬ লাখ শিশু

বণিক বার্তা ডেস্ক

সোমালিল্যান্ডের একটি স্কুলের এক দল শিক্ষার্থী। চার মৌসুমের খরায় ঝরে পড়েছে তাদের অনেক সহপাঠী ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

হর্ন অব আফ্রিকা বা আফ্রিকার শিং হিসেবে পরিচিত অঞ্চলে খরায় ৩৬ লাখেরও বেশি শিশু স্কুল থেকে ঝরে যেতে পারে। জাতিসংঘ বলছে, সংকট বহাল থাকলে পুরো একটি প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, কেনিয়া, সোমালিয়া ইথিওপিয়ার ৩৬ লাখেরও বেশি শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

পূর্ব আফ্রিকার কয়েকটি দেশকে একত্রে হর্ন অব আফ্রিকা বা আফ্রিকার শিং বলা হয়। ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সোমালিল্যান্ড জিবুতি নিয়ে অঞ্চল। বৃহত্তর পরিসরে কেনিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান উগান্ডার কিছু অংশ হর্ন অব আফ্রিকার অন্তর্ভুক্ত।

অব্যাহত খরায় পরিবারের ওপর যে প্রভাব পড়ছে তাতে স্কুল চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে এসব শিশুর। কয়েকটি জায়গায় পরিস্থিতি এমনটা দাঁড়িয়েছে যে গত ছয় মাসেই স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা ১১ লাখ থেকে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। টানা চারবার বর্ষা মৌসুমের দেখা নেই, এতে লাখো পরিবারে ন্যূনতম খাবারের সংস্থান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অপুষ্টিতে ভুগে শিশু মৃত্যুহার বেড়েছে। অনেক পরিবারই নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে নতুন জায়গায় পাড়ি জমাচ্ছে।

ইউনিসেফের পূর্ব দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা আভিয়ান জুং রানা জানান, খরার কারণে তিনটি অঞ্চলে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সোমালিল্যান্ডের শিক্ষক সমাজকর্মীরা বলছেন, এরই মধ্যে শ্রেণীকক্ষে প্রভাব দেখা যাচ্ছে। স্কুল থেকে ঝরে পড়াদের বড় অংশই মূলত মেয়ে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাদিয়া অ্যালিন বলেন, সংকটে সবচেয়ে ধকল যায় কন্যাশিশুদেরই ওপর। মেয়েদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঘটনা খুবই হতাশাজনক। এটা তাদের স্বপ্নহরণ করে। মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলে অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়।

সোমালিল্যান্ডের তগধির অঞ্চলের প্রধানশিক্ষিকা কিন ফারাহ হাসান বলেন, গত শিক্ষাবর্ষে ৫৬ ছাত্রীর মধ্যে মাত্র ৩১ জন টিকে আছে। কিছু মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে আবার কেউবা বাবা-মায়ের সঙ্গে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। 

ক্ষুধার তীব্রতা নিয়ে বলতে গিয়ে ওই শিক্ষিকা বলেন, যখন ক্লাসে অনেক ক্ষুধার্ত মুখ দেখি তখন ৩০ মিনিটের বিরতি দিই এবং বাজার থেকে কিছু খাবার কিনিয়ে আনি। কখনো কখনো বাসা থেকে তাদের জন্য খাবার রান্না করে আনি। খরা বা দুর্যোগের সময় বাল্যবিবাহ বেড়ে যায়। কারণ কন্যা বিনিময়ের মাধ্যমে যৌতুক সংগ্রহ করে অনেক বাবা-মা। ইউনিসেফের প্রাক্কলন, কেনিয়ায় ১৫ লাখ ৭০ হাজার, ইথিওপিয়ায় ১১ লাখ ৪০ হাজার সোমালিয়ায় নয় লাখ শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন