ডলার বিক্রিতে অতিমুনাফা

চার শর্তে ছয় ব্যাংক এমডিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডলার বিক্রিতে অতিমুনাফা করা ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি প্রধানদের পদে ফেরার সুযোগ দেয়া হয়েছে। চারটি নির্দেশনা পরিপালনের শর্তে ছয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক এমডিদের চিঠি দেয়া হয়।

শর্তগুলো হলো বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যমে মে জুনে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হয়েছে, তার অর্ধেক মুনাফা সিএসআর তহবিলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বাকি অর্থ ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে। সিএসআর তহবিলের অর্থ ব্যবহারের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। এর আগে ওই দুই মাসে অর্জিত মুনাফার পুরোটাই পৃথক হিসাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনসহ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে -সংক্রান্ত সব নিয়মনীতি অনুসরণসহ রাষ্ট্রের স্বার্থে নৈতিকতার বিষয়টি অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। বিরত থাকতে হবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারসহ সার্বিক মুদ্রাবাজারকে অস্থিতিশীল করতে পারে ধরনের যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে। চার নির্দেশনা পরিপালন করার শর্তেই ছয় ব্যাংকের এমডিকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারায় ওঠা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া ব্যাংকগুলো হলো ব্র্যাক, প্রাইম, দ্য সিটি, ডাচ্-বাংলা, সাউথইস্ট বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি নীতি বিভাগের পরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠি গতকাল এসব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

দুটি ব্যাংকের এমডি নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেয়ায় আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞ। যে চারটি শর্তে আমাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো মেনে নিতে কোনো আপত্তি নেই।

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছয় ব্যাংকের এমডিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছিল। ব্যাংক এমডিরা পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে একই ভুল না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কারণে অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান তাদের নিজ পদে ফিরতে পারবেন।

চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। ব্যাংক খাতের পাশাপাশি কার্ব মার্কেটেও (খুচরা বাজার) ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়। প্রতি ডলার ৮৫ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিদর্শনে দেশের অন্তত অর্ধেক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার বিক্রিতে অতিমুনাফার প্রমাণ মেলে। অবস্থায় গত আগস্ট দেশী-বিদেশী ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ১৭ আগস্ট ওই ব্যাংকগুলোর ব্যাখ্যা তলব করে এমডিদের চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ দায় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী, ট্রেজারি বিভাগের রিপোর্টিং প্রধান সরাসরি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাই কেন ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিচালক এমডিদের অপসারণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত ছয় ব্যাংকের এমডিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট আইন বিদ্যমান ব্যাংকিং নীতিমালা, নৈতিকতা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রদত্ত নির্দেশনা পরিপালন করে ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করতে পারে। তবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নেতিবাচক ব্যাংকিং কার্যকলাপের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে অতিমুনাফা অর্জন কোনোভাবেই কাম্য নয়। বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শনে অতিমুনাফা অর্জনের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। প্রথমবারের মতো -জাতীয় অতিমুনাফা অর্জনের বিষয়টি সংঘটিত হওয়ায় চার শর্তে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নির্দেশনাগুলো পরিপালনের শর্তে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারার আওতায় উত্থাপিত অভিযোগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন