অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ

৪৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে ৪৪ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এরই মধ্যে এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে সংস্থাটি। অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে এমন পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে চাল, আটা-ময়দা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, টয়লেট্রিজ, সাবান, সুগন্ধি সাবান, গুঁড়া সাবান ইত্যাদি।

প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, চালের জন্য রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টস, বেলকন গ্রুপ, সিটিগ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড; আটা-ময়দার জন্য সিটিগ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ; ডিমের জন্য প্যারাগন পোলট্রি, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতি, কাজী ফার্মস গ্রুপ; মুরগির জন্য প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড, কাজী ফার্মস গ্রুপ; টয়লেট্রিজ পণ্যের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলার শুনানির জন্য ২৬ ২৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।

প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে এরই মধ্যে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চালের ব্যবসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ১৯, আটা-ময়দায় আট, ব্রয়লার মুরগির ছয়, ডিম ছয় এবং সাবান টয়লেট্রিজ পণ্যসংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে মামলার আওতাধীন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৪। প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ১৬ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত এসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিযোগিতা কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান করেছে। এতে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে এসব পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, যা কমিশন আইন পরিপন্থী। মামলার শুনানিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবে।

২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে শুনানি হবে। সে অনুযায়ী অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ১৬ ধারা অনুযায়ী মামলা হয়েছে। ধারা ১৫ অনুযায়ী, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর ধারা ১৬ বলছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য।

কয়েক মাস ধরে দেশে চাল, তেল, আটা-ময়দা, ডিম, মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্ট টুথপেস্টের বাজারে অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার তদারকির পাশাপাশি এসব পণ্য উৎপাদনকারী বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে, যেখানে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। এরপর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান এক অনুষ্ঠানে দায়ী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।

গত কয়েক মাস বাজারে পণ্যদ্রব্যের মূল্য লাফিয়ে বাড়ছে। এর পেছনে ব্যবসায়ীরা মূল্যস্ফীতি জোগানের অভাবকে দায়ী করে আসছিলেন। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধির প্রমাণ পায়, যার মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া ডিমের বাজারে কারসাজিতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদনও পাঠায় সংস্থাটি। সে সময় ডিমের দাম হালিতে বাড়ে ৬০-৬৫ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি একাধিক মতবিনিময় সভায় মূল্য যতটা বৃদ্ধির কথা, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে।

বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চালের দামও। মাসখানেক আগে মোটা চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৫৫ টাকার ওপরে। একইভাবে চিকন চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৮৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে অভিযান শুরু চাল আমদানির কারণে তা আবার কমতে শুরু করে। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম এক মাস আগে বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি ২১০ টাকার বেশি দাঁড়ায়। অভিযানের কারণে ডিম মুরগির দাম কিছুদিন কম থাকলেও বর্তমানে আবারো বেড়েছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪০-১৪৫ টাকায় ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন