উৎপাদনে সমৃদ্ধ বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি

স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভিনদেশী মাছ

ফয়সাল আহমেদ, ঝিনাইদহ

বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারিতে ভিয়েতনামীয় পাঙাশ, কালবাউশ ও সুবর্ণ রুই মাছ লালন-পালন করা হচ্ছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চীন ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা মাছের রেণুর সমৃদ্ধ ভাণ্ডার বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি। চলতি বছর থেকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার হ্যাচারিতে চায়নিজ কার্পজাতীয় মাছের রেণু উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রথম বছরে মাঠপর্যায়ের মৎস্যচাষীরা সাফল্য পাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় কদর বেড়েছে সেগুলোর। বর্তমানে হ্যাচারিতে চীন থেকে আমদানি করা সিলভার, বিগহেড গ্রাস কার্পের রেণু এবং ভিয়েতনামীয় পাঙাশ, কালবাউশ সুবর্ণ রুই মাছ লালন-পালন করা হচ্ছে। আর কৃতিত্বের কারণে ৩৮ বছর পর বলুহর হ্যাচারির ললাটে যুক্ত হয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের পালক। হ্যাচারি কর্মকর্তারা আশা করছেন, পুরনো ব্রুড মাছের সঙ্গে বিদেশ থেকে আনা মাছ সংযোজন হলে হ্যাচারিতে রেণুর ব্রুড ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মৎস্যজীবী, হ্যাচারি, নার্সারি মালিক সাধারণ মানুষকে উন্নত কার্পজাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৮৪ সালে কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্সটি। ১০৩ একর আয়তনবিশিষ্ট হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। ঝিনাইদহ ছাড়াও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটায় হ্যাচারির উৎপাদিত রেণু। হ্যাচারির কর্মচারীরা জানান, করোনাকালে বা যেকোনো দুর্যোগের মধ্যেও শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে বলুহর হ্যাচারিতে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকা, সেখানে অর্জিত হয়েছে ৪৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

আব্দুল হাকিম নামে ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা এলাকার এক মৎস্যচাষী জানান, ১৫ বছর বন্ধ ছিল হ্যাচারির প্রশাসনিক ভবন। আবর্জনার স্তূপ পড়ে ছিল চারপাশ। সেগুলো এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফুলবাগান গড়ে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। ব্রুড উন্নয়নের পাশাপাশি বন্ধ থাকা প্রশাসনিক ভবনটিও সংস্কারের মাধ্যমে চালু করা হয়েছে। ফলে চিরচেনা এক পরিপাটি ভবনে চলে সব দাপ্তরিক কাজ। পুরো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাটগোপালপুর এলাকার মৎস্যচাষী সজীব আহম্মেদ বলেন, আমার মতো দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার মৎস্যচাষীরা বলুহর হ্যাচারির রেণু নিয়ে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেক বেকার যুবক পুনর্বাসিত হয়েছেন।

হ্যাচারি ম্যানেজার মো. আশরাফ-উল-ইসলাম জানান, বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানসম্পন্ন রেণু উৎপাদন করে মৎস্যচাষীদের কাছে সুলভ মূল্যে তা বিক্রি করে থাকে। এছাড়া আধুনিক কলাকৌশল সর্বশেষ লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হয় মৎস্যচাষীদের। ফলে এলাকায় বেকারত্ব হ্রাসের পাশাপাশি ব্যাপক হারে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মৎস্যচাষী, মৎস্যজীবী, হ্যাচারি, নার্সারি মালিক সাধারণ মানুষের পুকুরে ৬০ ভাগ রেণু বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি থেকেই যায়। তবে লোকবলের অভাবে কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে আশরাফ-উল-ইসলাম বলেন, মোট ২৭টি পদের মধ্যে ১৯টিতেই ফাঁকা পড়ে আছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় জনবল নিয়োগ করা হলে হ্যাচারি রেণু উৎপাদনে আকাশছোঁয়া সাফল্য এনে দিত। তাছাড়া হ্যাচারির অতিপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নও জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেক ভবন এখনো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে।

ব্যাপারে প্রকল্পের পরিচালক আলফাজ উদ্দিন শেখ বণিক বার্তাকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্যাচারি এটি। এখানে দেশী-বিদেশী পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। হ্যাচারির অবশ্য কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন