কমছে রুশ জ্বালানি তেল রফতানি অনিশ্চয়তায় বৈশ্বিক সরবরাহ

বণিক বার্তা ডেস্ক

রাশিয়ার কজমিনো তেল বন্দরের একটি টার্মিনাল ছবি: রয়টার্স

পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের পর খাত থেকে আয়ও বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। তবে চলতি মাস থেকে রফতানিতে টান পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে রফতানি ব্যাপক হারে কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ ঘাটতি চরম আকার ধারণ করবে। খবর ওয়েলপ্রাইস ডটকম। 

চলতি মাসের প্রথমার্ধে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি দৈনিক নয় লাখ ব্যারেল করে কমেছে। প্রশান্ত মহাসাগরে ঝড় বাল্টিক সাগর দিয়ে কার্গোর মাধ্যমে জাহাজীকরণ অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়াকে এর পেছনে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে রাশিয়া গড়ে দৈনিক ২৫ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করে। সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে রফতানি করা হয়েছিল গড়ে দৈনিক ৩৪ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল। সে হিসেবে রফতানি দৈনিক নয় লাখ ব্যারেল করে কমেছে।

চার সপ্তাহের গড় হিসাব বলছে, পাঁচ মাসের মধ্যে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি প্রথমবারের মতো দৈনিক ৩০ লাখ ব্যারেলের নিচে নেমেছে।

সব মিলিয়ে রফতানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো পুতিন সরকারের আয়ও সমানতালেই কমছে। এমনকি আগামী অক্টোবর পর্যন্ত খাত থেকে বৈদেশিক আয় কমতে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কারণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রফতানি শুল্ক ১৫ শতাংশ কম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, যদি রফতানিতে এমন নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল থেকে রাশিয়ার আয় কমে দেড় বছরের সর্বনিম্নে নামবে।

ফিনল্যান্ডভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআইইএ) দেয়া তথ্যানুযায়ী, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর প্রথম ছয় মাসে রাশিয়া জীবাশ্ম জ্বালানি রফতানির মাধ্যমে আয় করেছে ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার (১৫ হাজার ৮০০ কোটি ইউরো) এর মধ্যে ৫৪ শতাংশই আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। অর্থাৎ ছয় মাসে অঞ্চলটি রাশিয়ার কাছ থেকে হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের ( হাজার ৫০০ কোটি ইউরো) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ক্রয় করেছে। 

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) দেয়া তথ্য বলছে, গত আগস্ট পর্যন্ত রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি বেশ ভালো রকম স্থিতিশীল ছিল। যুদ্ধপূর্ব অবস্থার তুলনায় মাত্র দৈনিক চার লাখ ব্যারেল নিচে ছিল রফতানির পরিমাণ। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে বিশ্ববাজারকে দৈনিক ২৪ লাখ ব্যারেল সরবরাহ সংকটে পড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। অতিরিক্ত দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি পণ্য ১৪ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জন্য নতুন গন্তব্য খুঁজে নিতে হবে বলেও জানিয়েছে আইইএ।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জি- ভুক্ত দেশগুলো রুশ জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। বেঁধে দেয়া দামে রাশিয়া জ্বালানি তেল বিক্রি করতে সম্মত হলে দেশটি মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টেশন সার্ভিস ব্যবহারের সুযোগ পাবে। তবে যেসব দেশ দামের সীমা নির্ধারণে চুক্তি করেছে, সেসব দেশের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, গ্যাস কয়লাসহ সব ধরনের জ্বালানি পণ্য রফতানি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অনড় পুতিন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন