যুক্তরাজ্যেও রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধের পরিকল্পনা সিটিগ্রুপের

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের খুচরা ব্যাংকিং কার্যক্রম বিক্রির পরিবর্তে বিভাগটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে সিটিগ্রুপ ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিশ্বজুড়ে রিটেইল ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসছে সিটিগ্রুপ। মেক্সিকো এশিয়ার কয়েকটি বাজারের পর এবার যুক্তরাজ্যের ভোক্তা ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকটি। মুনাফা শেয়ারদরে সমকক্ষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে প্রধান নির্বাহী জেন ফ্রেজারের কৌশলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন বাজার থেকে ভোক্তা ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসছে সিটি। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আরো লাভজনক করপোরেট সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় মনোযোগ বাড়াতে চাইছে।

রয়টার্সের খবর অনুসারে, গত বছর শীর্ষ পদে দায়িত্ব নেয়ার পর জেন ফ্রেজার এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকার ১৩টি বাজারে ভোক্তা ব্যাংকিং গুটিয়ে সিটিগ্রুপের ব্যবসাকে সরল করার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০০৭-০৯ সালের আর্থিক সংকটের পর সম্পদ পুনর্গঠন করতে বাধ্য হয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর জেন ফ্রেজারের অধীনে বড় পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সিটিগ্রুপ।

ব্যাংকটি যুক্তরাজ্যের কিছু খুচরা ক্লায়েন্টকে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্থানান্তরিত হতে বলেছে। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কেবল একটি শাখা নিয়ে যুক্তরাজ্যের খুচরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। এখন সেটি বন্ধ করে দিলে প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো আর্থিক প্রভাব পড়বে না।

নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আয়রনহোল্ড ক্যাপিটাটের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ সিংহাই বলেন, খুচরা ব্যাংকিংয়ে সাধারণত সম্পদ ব্যবস্থাপনার চেয়ে অনেক কম মুনাফা মার্জিন থাকে। এজন্য খুচরা ব্যাংকিং ছেড়ে উচ্চ মুনাফার সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় মনোযোগ বাড়াচ্ছে সিটিগ্রুপ।

এদিকে সিটিগ্রুপ গুটিয়ে নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী জেপি মরগান গোল্ডম্যান স্যাকস সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাজ্যে কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে। গত মে মাসে জেপি মরগানের নির্বাহীরা জানিয়েছিলেন যে, প্রতিষ্ঠানের খুচরা ব্যাংকিং যুক্তরাজ্যে পাঁচ লাখেরও বেশি গ্রাহক আকৃষ্ট করেছে। গোল্ডম্যান স্যাকসও ভোক্তা শাখা মার্কাসের আওতায় সঞ্চয় হিসাবের অফার করে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটি যুক্তরাজ্যের খুচরা ব্যাংকিং কার্যক্রম বিক্রির বিষয়টি বিবেচনা করছে না। বরং শাখাটির কার্যক্রম বন্ধ করে গ্রাহকদের স্থানান্তরিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে দেশটির খুচরা ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত মাসের শেষ দিকে রাশিয়ায় ভোক্তা বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবসা বন্ধের ঘোষণা দেয় সিটিগ্রুপ। চলমান তৃতীয় প্রান্তিকেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গুটিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করবে ওয়াল স্ট্রিট জায়ান্টটি। এতে আগামী ১৮ মাসে ব্যাংকটির ১৭ কোটি ডলার ব্যয় হবে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে পদক্ষেপ নিচ্ছে সিটি। উভয় ব্যবসা বিক্রির জন্য কোনো ক্রেতা খুঁজে না পাওয়ায় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মার্কিন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে সিটির। দেশটিতে প্রতিষ্ঠানটির তিন হাজার কর্মী রয়েছেন। বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে দেশটিতে ১৫টি শাখার প্রায় হাজার ৩০০ কর্মী চাকরি হারাবেন। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বলেন, ভোক্তা ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যাংকটি দেশটিতে বহুজাতিক প্রাতিষ্ঠানিক ক্লায়েন্টদের পরিষেবা দেয়া চালিয়ে যাবে। বিশেষ করে রাশিয়ায় কার্যক্রম বন্ধের জটিল কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখবে সিটি।

এর আগে গত বছর সিটি ফিলিপাইনের ভোক্তা ব্যাংকিং ব্যবসা বিক্রি করতে সম্মত হয়েছিল। ব্যাংকটি দক্ষিণ কোরিয়ায় ভোক্তা ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসাও বিক্রি করে দিয়েছে। সে সময় ব্যাংকটির পক্ষ থেকে ভারত, তাইওয়ান, চীন মেক্সিকো থেকেও খুচরা ব্যাংকিং কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

এরপর ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ভিয়েতনামের ব্যবসা বিক্রির ঘোষণা দেয় সিটিগ্রুপ। ৩৬৫ কোটি ডলারের চুক্তিতে ব্যবসা কিনে নেয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক (ইউওবি)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন