ভারতের একটি স্পিনিং মিলে কাজ করছেন তুলা শ্রমিকরা ছবি: রয়টার্স
২০২২-২৩ মৌসুমে ভারতের তুলা উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাস মিলেছে। আগামী অক্টোবর পর্যন্ত দেশটির আবহাওয়া তুলা উৎপাদন সহায়ক থাকবে বলে জানা গিয়েছে। এ তথ্য পুরো তুলার ভ্যালু চেইনের জন্য স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে। এমন সময় তুলা উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাস মিলল, যখন তুলা সংকটে ভারতের ৫০ শতাংশ স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কেন্দ্র সরকার।
অক্টোবরে ভারতে তুলা উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। এ মৌসুমে দেশটির উৎপাদন গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সংস্থা কটন করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (সিসিআই) এক প্রতিবেদনে জানায়, আসন্ন মৌসুুমে ভারতে ৩ কোটি ৬০ লাখ বেল (প্রতি বেলে ১৭০ কেজি) তুলা উৎপাদন হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতীয় তুলার দাম ছিল ক্যান্ডিপ্রতি (প্রতি ক্যান্ডিতে ৩৫৬ কেজি) ৬০ হাজার রুপি। মে মাস নাগাদ দাম বেড়ে ১ লাখ ১০ হাজার রুপিতে উন্নীত হয়েছে। আর ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণেই বেশি লাভের আশায় কৃষকরা পণ্যটির আবাদ বাড়িয়েছেন। এ বছর তুলার আবাদ গত বছরের তুলনায় ৭-৮ শতাংশ বেড়েছে।
সিসিআইয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অর্জুন দেব বলেন, গত বছর ভারতে ১ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর তা বেড়ে ১ কোটি ২৮ লাখ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। এবার অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফলনও ভালো হবে। মৌসুম শেষে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ কোটি ৬০ লাখ বেলে।
তবে ব্যবসায়ীদের সংগঠন কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (সিএআই) পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ মৌসুমে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ কোটি ৫০ লাখ বেল। যদি মৌসুমের অন্য মাসগুলোয়ও আবহাওয়া উৎপাদন সহায়ক থাকে, তবে উৎপাদন ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৭৫ লাখ বেলে উন্নীত হবে। সিএআইয়ের প্রেসিডেন্ট অতুল গানাত্রা বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী আবহাওয়া অনুকূল না থাকলে উৎপাদন কমে ৩ কোটি ২৫ থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ টনে নামতে পারে।
গানাত্রা আরো বলেন, তুলা সংকটের কারণে বর্তমানে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও চাপ দেয়া হচ্ছে। বছরের এ পর্যন্ত ভারতের সুতা এবং টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস পণ্য রফতানি প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে বলেও উল্লেখ করেন গানাত্রা।
তুলার সবচেয়ে বড় উৎপাদক দেশ ভারত। ভারি বৃষ্টিপাত ও কীটপতঙ্গের আক্রমণে চলতি মৌসুমে দেশটিতে তুলা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদন ঘাটতির পরিমাণ এতটাই তীব্র যে ভারত আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ চাহিদা মেটাতে বাধ্য হচ্ছে।
শুধু ভারতেই নয়, চরম বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সব বৃহৎ তুলা সরবরাহকারী দেশ বিপাকে পড়েছে। আসন্ন দিনগুলোয় পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রধান কাঁচামালটির সরবরাহ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। এ পরিস্থিতিতে নতুন মৌসুমে ভারতের উৎপাদন বাড়ার তথ্য কিছুটা আশার আলো জ্বেলেছে। দেশটির প্রভাবে বৈশ্বিক সরবরাহে ভারসাম্য ফিরবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
