চিকিৎসায় স্টেম সেল কতটা কার্যকর

ফিচার ডেস্ক

লিভার ফেইলিউরের শেষ পর্যায়ের একমাত্র প্রমাণিত কার্যকরী চিকিৎসা লিভার প্রতিস্থাপন। এর জন্য প্রয়োজন হয় দাতার থেকে একটি সুস্থ অঙ্গ দান। অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতিতে রয়েছে দাতার সংকটও। সমস্যা সারা বিশ্বেই বিদ্যমান। অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে আপস করে চলতে হয়। এছাড়া প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি কমাতে আজীবন ইমিউনোসপ্রেশন থেরাপির প্রয়োজন হয়।

এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। অবশেষে সমাধান পেয়েও যান তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন জানিয়েছে, লিভারের শেষ ধাপে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে স্টেম সেল থেরাপির কার্যকারিতা পাওয়া গিয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এটি ব্যবহারে মডেল ফর এন্ড-স্টেজ লিভার ডিজিজ (এমইএলডি) স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। পাশাপাশি রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে এসেছে বলে জানানো হয়। তীব্র লিভার রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রতিস্থাপন পদ্ধতি জটিল হওয়ায় স্টেম সেল থেরাপিকে সম্ভাবনাময় চিকিৎসা হিসেবে বলেছেন গবেষকরা।

২০২০ সালে প্রকাশিত জার্নাল অব সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার মেডিসিনের এক প্রবন্ধে বলা হয়, মেসেনকাইমাল স্টেম সেল থেরাপি একটি বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। মেসেনকাইমাল স্টেম সেল প্রয়োগের পর আক্রান্ত হওয়া লিভারের উন্নতি হতে পারে। এছাড়া ইমিউনোমোডুল্যাটরি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিফাইব্রোটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রয়োগে লিভারের কার্যকারিতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমেরিকান জার্নাল অব ট্রান্সল্যাশনাল রিসার্চে ২০২১ সালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, বর্তমানে এটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে স্টেম সেল কার্যকর নিরাপদ। তবে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা কেমন তা নিয়ে এখনো বিস্তারিত গবেষণা চলছে। স্টেম সেল বিকাশ, এতে সাফল্যের হার এবং লিভার রোগের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি কিনা, এটি স্পষ্ট নয়।

মূলত ২০১৩ সালে প্রাথমিকভাবে পদ্ধতির ওপর গবেষণা চালায় আমেরিকার চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত লিভার রোগীদের ক্ষেত্রে স্টেম সেল ব্যবহারের জন্য ১১টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। আলাদাভাবে পরিচালিত হওয়া ট্রায়ালগুলোতে দেখা যায়, লিভার ফেইলিউরের জন্য শিরায় চিকিৎসা নিরাপদ নয়। তবে অন্যান্য পরীক্ষায় কার্যকর পাওয়া গিয়েছে বলে জানান গবেষকরা।

তারা আরো জানান, ট্রায়ালে জীবন মানের উন্নতি থেকে শুরু করে লিভারের কার্যকারিতা বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া আক্রান্ত লিভারের উন্নতির পাশাপাশি মৃত্যুহারও কমে গিয়েছে। বিশেষ করে রোগীদের এমইএলডি স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।

আরেকটি গবেষণার বিশ্লেষণে বলা হয়, স্টেম সেল থেরাপি অ্যাকিউট-অন-ক্রনিক লিভার ফেইলিউর (এসিএলএফ) রোগীদের স্বল্পমেয়াদি বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এতে দেখা যায়, একাধিক ইনজেকশনের চেয়ে একক ইনজেকশন বেশি কার্যকর ছিল। অস্থিমজ্জাপ্রাপ্ত স্টেম সেলগুলো নাভির কর্ড থেকে প্রাপ্ত কোষগুলোর চেয়ে বেশি কার্যকর ছিল। আলাদাভাবে চালানো এসব ট্রায়াল থেকে কোনো তীব্র লিভার রোগীদের উন্নতি করার তথ্য পাওয়া যায়নি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে লিভার চিকিৎসায় স্টেম সেল থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রতিস্থাপনের সংকট থাকলেই এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পদ্ধতিতে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় অনেকাংশে কম।

এটি সিরোটিক লিভার রোগের ক্ষেত্রে অভিনব চিকিৎসা বিকল্প হলেও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ছিল না। তাছাড়া ট্রায়ালগুলোতে কাঠামোগত অভাব ছিল বলে জানানো হয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যগুলো থেকে স্থায়ী উপসংহার টানা কঠিন। তবে লিভার ফেইলিউরের চিকিৎসায় স্টেম সেল থেরাপিকে সম্পূর্ণভাবে জানতে হলে এর ওপর ব্যাপক আকারে গবেষণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন