স্বপ্নের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

শফিকুল ইসলাম

সাম্প্রতিক সময়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার হয়ে উঠেছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। আপনি যেমন প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন তেমনি ভ্রমণও করতে পারবেন। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি চ্যালেঞ্জিং, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী দুঃসাহসিক পেশা। পেশায় সরকারি-বেসরকারিভাবে দেশী-বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজের প্রকৌশলী হয়ে সারা বিশ্বে সিন্দবাদের মতো ঘুরে বেড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন অনেকে। একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের পছন্দ অনুযায়ী স্থল বা সমুদ্রে পারদর্শিতার অনেক সুযোগ রয়েছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নত বিশ্বে একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে স্বীকৃত। একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে একজন সফল নাবিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সেই খাতগুলোর একটি যা প্রচুর অর্থ উপার্জনের জন্য একটি ক্যারিয়ার হতে পারে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সমুদ্রগামী জাহাজ এবং নেভিগেশন সরঞ্জামগুলোর নকশা, উদ্ভাবন, নির্মাণ রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাথমিকভাবে নৌযান, জাহাজ, বিমানবাহী বাহক, সাবমেরিন, ট্যাঙ্কার ইত্যাদির অভ্যন্তরীণ সিস্টেমের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে। জাহাজ পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সমস্যা সমাধানই মূলত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। সমুদ্রের জাহাজ, ডক এবং ল্যান্ডভিত্তিক ইঞ্জিন ইনস্টলেশন, অপারেশন রক্ষণাবেক্ষণ, নেভিগেশন, জাহাজ ডিজাইন এবং বিল্ডিং, মেশিন ডিজাইন, টুলস মেকানিজম, পাওয়ার প্লান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানো হয় শিক্ষার্থীদের। একজন মেরিনার জাহাজে থাকা সব ধরনের প্রধান যান্ত্রিক এবং প্রকৌশল সরঞ্জামগুলোর পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ মেরামতের জন্য অভিজ্ঞ। এখানকার ছাত্রদের হাইড্রোডাইনামিকস, নেভাল অপারেশন, ডিজাইন, লজিস্টিকস, রিসোর্স, অ্যাকুয়াকালচার প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনাসহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন স্নাতক মেকানিকস, হাইড্রোলিকস, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বিশেষায়িত কম্পিউটার সফটওয়্যারের ভালো জ্ঞানের অধিকারী হয়ে থাকেন। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, যেমন নৌ-স্থাপত্য, নটিক্যাল সায়েন্স, ওশানোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।

কেন পড়ব মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

আগে উচ্চশিক্ষা শেষ করে একটি দুর্দান্ত ক্যারিয়ার গড়া সহজ ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। কারণ এখানে সাধারণ বিষয়ে অধ্যয়নরত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাই তাদের চাকরির ক্ষেত্রে একটি কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী বিষয়ে পড়াশোনা করলে সফল ক্যারিয়ার গড়া সহজ হবে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি বিশেষ ক্ষেত্র। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ পণ্য শিপিং ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে পরিবহন হয়। প্রতি বছর ৫০ হাজার বণিক জাহাজ প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।

ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি

ভর্তি পরীক্ষায় মোট ৩০০ নম্বর। মাধ্যমিকে প্রাপ্ত জিপিএতে ৭৫ নম্বর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত জিপিএতে ১২৫ নম্বর, মোট ২০০ এবং ভর্তি পরীক্ষা হবে নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরে। পদার্থবিজ্ঞান ২৫, গণিত ২৫, বাংলা ১০, ইংরেজি ২৫ সাধারণ জ্ঞান ১৫। পরীক্ষায় মোট ২০০টি প্রশ্ন থাকবে। পাস নম্বর ৪০ শতাংশ। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রাথমিক শারীরিক মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। দৌড় ৪০০ মিটার, পুশআপ ১০টি, রোপ আরোহণ ন্যূনতম মিটার সাঁতার ন্যূনতম ৬০ মিটার একটানা অতিক্রমে সক্ষম হতে হবে।

আবেদনের যোগ্যতা

মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ .৫০। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পদার্থ গণিত বিষয়ে পৃথকভাবে জিপিএ .৫০ এবং ইংরেজিতে ন্যূনতম জিপিএ .০০ ঘাটতি থাকলে আইইএলটিএস গড় স্কোর . থাকতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের লেভেলে পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে ন্যূনতম তিনটিতে গ্রেড দুটিতে বি গ্রেড থাকতে হবে এবং লেভেলের জন্য ন্যূনতম দুটি বিষয়ে বি গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ (উভয় পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতসহ) হতে হবে। শারীরিক উচ্চতা পুরুষদের জন্য ফুট ইঞ্চি এবং নারীদের জন্য ফুট ইঞ্চি। ওজন হতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিএমআই চার্ট মোতাবেক। এছাড়া নটিক্যাল ক্যাডেটের জন্য দৃষ্টিশক্তি / এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডেটের জন্য /১২ (চশমাসহ অবশ্যই / হতে হবে) বৈবাহিক অবস্থা অবিবাহিত হতে হবে। বয়স হতে হবে ২২ বছরের কম।

ক্যারিয়ার কোথায়

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা শেষ করে এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাফল্য সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। পেশাগত জীবনে দক্ষতা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মাসে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা বেতনে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া কাজে যোগদানের সাত-আট বছরের মধ্যেই জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বা ক্যাপ্টেন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বেতন বাংলাদেশী টাকায় ১০ লাখের বেশি। বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েটরা তাদের সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন