৩১ হাজার বছর আগে অস্ত্রোপচারের নিদর্শন ইন্দোনেশিয়ায়!

ছবি: সিএনএন

ইন্দোনেশিয়ার গুহায় স্যাঁতস্যাঁতে এক কবর। সেখানেই প্রস্তর যুগের হাড় খুঁজে পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। তাদের বিশ্বাস, এ আবিষ্কার ইতিহাসকে নতুন করে পাঠ করতে সাহায্য করবে। কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, হাড়টি কমপক্ষে ৩১ হাজার বছর আগের। বোর্নিওর পূর্ব কালিমান্তান প্রদেশে লিয়াং টেবো গুহায় পাওয়া যায় হাড়টি। স্থানীয় সময় বুধবারে নেচারে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। 

হাড়টি কোনো এক তরুণ কিংবা তরুণীর বাম পায়ের নিচের অংশ। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, মৃত্যুর আগেই ওই পায়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। যা প্রমাণ করে সেই সময়েও মানুষ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অস্ত্রোপচারের দক্ষতা অর্জন করেছিল। যা প্রস্তর যুগ সম্পর্কে ঐতিহাসিক এবং বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা বদলে দেয়ার মতো। 

গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যাক্সিম উবার্ট মনে করেন, এটি মানবজাতির অস্ত্রোপচার এবং জটিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসকে অনেক পেছনের দিকে নিয়ে যায়। অবশ্যই তাদের শারীর-বিদ্যা, রক্তপাত বন্ধ করার কৌশল, এনেস্থেশিয়া এবং জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল। অথচ এ সব জটিল বিদ্যা আমরা জেনেছি অল্প কিছু দিন আগে। 

বিশেষজ্ঞগণ এর আগে ধারণা করতেন কৃষি সভ্যতায় প্রবেশের আগে মানুষ শারীরবিদ্যার মতো জটিল বিষয়ে মানুষের দখল ছিল না। আর মানুষ স্থায়ী হয়েছে ১০ হাজার বছর আগে। এর আগে ফ্রান্সে সবচেয়ে পুরাতন অস্ত্রোপচারের নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রায় সাত হাজার বছর আগের সেই হাড় একজন বৃদ্ধ কৃষকের। 

পশ্চিমা ধারায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে অস্ত্রোপচারের ইতিহাস মাত্র ১০০ বছরের। এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে বেশির ভাগ রোগীই অস্ত্রোপচারের সময় মারা যেত। অস্ত্রোপচারের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত, ক্ষত, পরবর্তী সময়ের ইনফেকশন কিছু দিন আগেও ছিল ভয়াবহ রূপে। ফলে এ আবিষ্কার রীতিমতো চমকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির গবেষক টিম ম্যালোনি। 

বাম পায়ে অস্ত্রোপচারের পর ছয় থেকে নয় বছর বেঁচে ছিলেন সেই ব্যক্তি। কেটে ফেলা অঞ্চলে হাড় নতুন করে গঠিত হতে সময় লেগেছে। অথচ হাড়ে কোনো ইনফেকশনের দাগ নেই। ৩১ হাজার বছর আগে যে ডাক্তার এ অপারেশন করেছেন পাথরের চাকু দিয়ে; অবশ্যই তার রক্তপ্রবাহ, শারীরবিদ্যা এবং ইনফেকশন নিয়ে বিস্তারিত জ্ঞান ছিল। এতো বড় অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সেবার জন্য নিশ্চয় তাদের সমাজে তেমন পরিবেশ ছিল। ‘আসলে এ অস্ত্রোপচারের পর এতো বছর বেঁচে থাকাটাই আমাদের বিস্মিত করেছে, বলেন ইউনিভার্সিটি অব ডুরহামের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক শার্লোট রবার্টস। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটিই এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরাতন কবর, যা খুব সচেতনতার সঙ্গে নির্মিত হয়েছে। কবরের ওপরে চিহ্নিত করা হয়েছে চুনাপাথর দিয়ে। লাশকেও রাখা হয়েছে বেশ সচেতনতার সঙ্গে। আবিষ্কারকদের দাবি অনুসারে, ইন্দোনেশিয়ার এ অঞ্চল এক সময় আদিমানবদের লীলাভূমি ছিল। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস এবং হোমো লুজোনেনসিসের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে এ অঞ্চলেরই বিভিন্ন দ্বীপে। আমরা আবার যেতে চাই ওখানে, সম্ভবত আরো কিছু নজির খুঁজে পাবো মানব সভ্যতার আদি ইতিহাসের।- সিএনএন অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন