১৪৫ টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ

কাজে ফেরেননি চা শ্রমিকরা দাবিতে অনড়

বণিক বার্তা ডেস্ক

নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল সিলেটে ভুখা মিছিল করেন চা শ্রমিকরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দিন যত যাচ্ছে আরো জটিল হচ্ছে চা শ্রমিকদের আন্দোলন। এতদিন যাদের নেতৃত্বে নানা কর্মসূচি পালন করে এসেছেন, শনিবার থেকে সেই ইউনিয়ন নেতাদের কথাও শুনছেন না শ্রমিকদের এক পক্ষ। সরকার নির্ধারিত ১৪৫ টাকার মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল ফের আন্দোলনে নামেন তারা। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অবরোধ করেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। ফলে ওই সড়কের প্রায় দু-তিন কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করতে হয় বাড়তি পুলিশ। এর বাইরেও বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি চা বাগানে ছোট ছোট মিছিল হয়েছে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে মজুরি ২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাতে শ্রমিক নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হলে তা মেনে নেন স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা।

নতুন মজুরি ঠিক করার পর কথা ছিল গতকাল সকাল থেকেই নিজ নিজ বাগানে কাজে ফিরবেন চা শ্রমিকরা। অথচ কাজে না ফিরে নবম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেন। সিলেট হবিগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। মৌলভীবাজারের বাগানগুলোতেও কাজে যোগ দেননি শ্রমিকরা। কোথাও কোথাও বাগান ব্যবস্থাপকদের ওপর শ্রমিকরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাখ্যানের পরও পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়ায় চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, তাদের আন্দোলনে বাইরের বিভিন্ন সংগঠন ঢুকে পড়েছে। সাধারণ শ্রমিকদের তারা উসকানি দিচ্ছে।

সিলেটের বাগানগুলোতে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোই সুনসান নীরবতা। নিজেদের নেতাদের আহ্বানকে উপেক্ষা করে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিকরা। গতকাল সকালে তারা সিলেট মহানগরীতে প্রবেশপথ এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর আশ্বাসে শ্রমিকরা রাজপথ থেকে সরে যান। তবে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। অপরদিকে হবিগঞ্জের জগদীশপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান অপর একটি পক্ষ। সময় মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। লস্করপুর চা-ভ্যালির সভাপতি রবিন্দ্র গৌড় বলেন, সুরমা, তেলিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা নিজ নিজ চা বাগানে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।

চা শ্রমিকরা জানান, ১২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির জন্য তারা আন্দোলনে নামেননি। আন্দোলন ছাড়াই প্রতিবার চুক্তিতে পরিমাণ মজুরি বাড়ে। বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে যুক্তিসংগত একটা মজুরি কাঠামোর দাবি তাদের। মালিক পক্ষ ২০ টাকা বাড়ানোর কথা আগেই বলেছিল, পরে টাকা বাড়ানো হয়েছে। এটা শ্রমিকরা মানেননি।

শ্রমিকদের দাবি, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে শনিবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তাদের নেতাদের চাপ দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। সাধারণ চা শ্রমিক সেটা মানেননি, তাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা তাদের। চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাতে পুনরায় ভিডিওবার্তা দিয়ে তা প্রত্যাহার করে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগানের বাসিন্দা জানান, সাধারণ শ্রমিকরা যেহেতু ১৪৫ টাকা মজুরি মানছেন না। তাই তিনি নিজেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রয়েছেন।

তবে চলমান আন্দোলনে বাইরে থেকে উসকানি দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তার দাবি, তাদের আন্দোলনে বাইরের বিভিন্ন সংগঠন ঢুকে গেছে। যার জন্য সাধারণ শ্রমিকরা কমান্ড মানছেন না। এখন যদি কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, ভাংচুর বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়; তবে তার দায়ভার চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে আমি নেব না।

লাক্কাতুরা চা বাগানের সামনে গতকাল শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় রাজু গোয়ালা বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হয়। এখন যারা আন্দোলনে আছেন তাদের অনুরোধ করব, যেহেতু আপনারা মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাই বাগানে অথবা কর্তৃপক্ষের অফিসের সামনে গিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করুন। কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে রাষ্ট্রের অথবা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি করবেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন