কারাগারের গল্পটা মিস্ট্রি

কারাগারের শ্যুটিং

আজ ওটিটি প্লাটফর্ম হইচইয়ে শুরু হচ্ছে অরিজিনাল সিরিজ কারাগারের প্রথম পর্বের স্ট্রিমিং। সিরিজটি নির্মাণ করেছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকি এর আগে তার নির্মিত তাকদীর দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। কারাগার তাকদীর অনেকটাই ভিন্ন। সে ভিন্নতা, সিরিজের গল্প, নির্মাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নির্মাতা আলাপ করেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মাহমুদুর রহমান 

২৫০ বছর ধরে একজন মানুষ একটি সেলে বন্দি। গল্পটা কি ফ্যান্টাসি, না সায়েন্স ফিকশন?

গল্পটা মিস্ট্রি। সায়েন্স ফিকশন বা ফ্যান্টাসি না। একজন মানুষ ২৫০ বছর একটা কারাগারে বন্দি থাকছে, সেটা কী করে সম্ভব, তা আসলে একটা রহস্য। সে রহস্যটা নিয়ে কারাগারের গল্প সাজানো হয়েছে। বলতে পারেন, মানুষের সারভাইভালের বিষয়টা এখানে এসেছে। পাশাপাশি ওই ২৫০ বছরের একটা ইতিহাসও এখানে আছে।

কারাগারের থিমটা মূলত কার ভাবনা?

আইডিয়াটা নেয়ামত উল্যাহ মাসুমের। মূল গল্পটাও তার। তাকদীরে মাসুম আমার কো-রাইটার ছিল। কারাগারে সে লিড রাইটার। সিরিজে আমরা একটা রাইটার প্যানেল নিয়ে কাজ করেছি। আমাদের কাজ ছিল আইডিয়াকে সার্ভ করা।

পাঁচজন লেখক নিয়ে কাজ করা তো একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমার বিশ্বাস দর্শকরা তা জানতে আগ্রহী হবেন...

আসলে আমাদের একটা রিসার্চের প্রয়োজন ছিল। মানে ২৫০ বছরের ইতিহাসটা বলতে গেলে তো গবেষণার দরকার হবেই। আর সেটার জন্য একাধিক লেখক দরকার হয়। আমরা পাঁচজনের (নেয়ামত উল্যাহ মাসুম, সৈয়দ আহমেদ শাওকি, সুহান রিজওয়ান, রাশেদুজ্জামান রাকিব সিদ্দিক আহমেদ) একটা প্যানেল তৈরি করি। এরপর আলোচনা, আইডিয়া বাউন্স ব্যাক করা, সেগুলোকে গোছানোর ব্যাপারগুলো হয়েছে। আসলে লেখার বিষয়টা তো খুব জটিল এবং চার দেয়ালে বন্দি হয়ে লেখাটা কখনো কখনো একাকীত্ব তৈরি করে। আমরা তাই ব্যাপারটা একটু সহজ আর জীবন্ত করার জন্য টিমটা বড় করে কাজ করেছি। এতে আইডিয়া, দৃশ্য বা সংলাপ নিয়ে পারস্পরিক আলোচনাটা তাত্ক্ষণিকভাবে করতে পেরেছি।

তাহলে প্রক্রিয়াটা বেশ দীর্ঘ হওয়ার কথা। কতটা সময় লেগেছে এতে?

পুরো প্রক্রিয়াটা মানে লেখালেখি, গল্প সাজানো থেকে স্ক্রিপ্ট তৈরি করে শুটিংয়ে যেতে এক বছর সময় লেগেছে।

কারাগার থেকে সরে আসি একটু। আমরা তাকদীর দেখেছি। সেখানে চঞ্চল চৌধুরী সোহেল মণ্ডলের চরিত্র দুটো থেকে একটা জুটি তৈরি হয়ে গেল। এমনটা হবে তা কি ভেবেছিলেন? জুটির বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

জুটি আসলে দর্শক তৈরি করে। তাদের যখন জুটি পছন্দ হয়, তাদের আপন করে নেয়এটা দর্শকের ওপরই নির্ভর করে। নির্মাতা সেটা করেন না। নির্মাতা তার গল্প চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। সেখানে জুটিতে আলাদা করে গুরুত্ব দিলে অন্যান্য চরিত্র সঠিকভাবে চিত্রিত না হওয়ার ভয় থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য প্রতিটা চরিত্রই ইম্পর্ট্যান্ট। সেভাবেই কাজ করেছি। আর কাজ করার সময় ভাবিনি এত পপুলার হয়ে যাবে জুটিটা।

জুটি পপুলার করতে হলে আলাদা করে জুটি নিয়ে ভাবতাম। তারা দুজনেই বেঁচে থাকত। পরের সিজনে তারা আবার ফিরত বা তেমন হলে একটা প্রিকুয়াল তৈরির চেষ্টা করতাম যে ওদের সম্পর্কটা কোত্থেকে শুরু হলো। জুটিটা সাব-প্লট কিন্তু সেটা দর্শকের ভালো লেগে গেল। তবে এতে আমি অবশ্যই খুশি যে দর্শক জুটিটাকে আপন করে নিয়েছে।

প্রিকুয়ালের কথা যখন উঠল তখন দর্শকের একটা প্রশ্নের প্রতিধ্বনি করি। তাকদীরের কি কোনো সিকুয়াল আসার সম্ভাবনা আছে?

সিকুয়াল বা প্রিকুয়াল যা- হোক, তেমন কোনো চিন্তা মুহূর্তে আমার নেই। তবে নেভার সে নেভার। হতেও পারে। আসলে তাকদীর বানানোর সময় এর পরের সিজন নিয়ে আমাদের কোনো প্ল্যান ছিল না। তাকদীরের একটা সিজনে যে গল্পটা দর্শক দেখেছে ওটা ওখানেই শেষ। কিন্তু এটা বলতে পারি, গল্পের পরে কী হয় সেটা আসবে না কোনো সময়।

ওটিটি টেলিভিশনে কাজ করার ক্ষেত্রে পার্থক্যগুলো কী? কোথায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

টেলিভিশনে কিছু লিমিটেশনস থাকে। নির্মাতার ক্ষেত্রে থাকে, দর্শকের ক্ষেত্রেও থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম দেখার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে টিভিতে। ওটিটিতে দর্শক নিজের সময় মতো, ইচ্ছামতো দেখতে পারে। সেখান থেকে আমার মনে হয় ওটিটি আসলে দর্শকদের আরো স্বাধীনতা দিচ্ছে। ওটিটি টেলিভিশনের দর্শকও তো আলাদা। তাই সে অনুসারে নির্মাতারাও নতুন বা ভিন্ন ধারার কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

কারাগারের পরের পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে যদি কিছু শেয়ার করেন।

প্রথমত, আজ আসছে কারাগারের পার্ট ওয়ান। এর পরই আসবে কারাগারের দ্বিতীয় পর্ব, অর্থাৎ পার্ট টু। আসলে সিরিজটা এভাবেই প্ল্যান করা। একটা সিরিজ কয়েকটা পর্বে ভাগ হওয়ার কথা। ইন্টারন্যাশনালি সিরিজের ক্ষেত্রে যেটা হয়একটা থাকে মিনি সিরিজ যেখানে একটা সিজনে একটা গল্প শেষ হয়। আর ওয়ের সিরিজে একটা গল্পই কয়েকটা পার্ট, কয়েকটা সিজনে আসে। কারাগার এভাবে প্ল্যান করা। সব পার্ট, সিজন একসঙ্গেই লেখা। গল্পটা তৈরি করতে কারণেই এক বছর সময় নিতে হয়েছে। আর হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম, আমার বিশ্বাস পার্ট ওয়ান দেখে দর্শক প্রশ্নটা করবে যে পার্ট টু কবে আসবে। সেক্ষেত্রে একটা তথ্য দিতে পারি, কারাগারের দ্বিতীয় পর্বের শুটিং শেষ। তাই খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। পার্ট টু খুব দ্রুতই আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন