রাইন নদীর পানি কমছে

পরিবহন বাধা নিয়ে শঙ্কায় জার্মানির শিল্প খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

জার্মানির রাইম নদীর পানি আশঙ্কাজনক মাত্রায় কমছে ছবি: রয়টার্স

তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড গরম অনাবৃষ্টির কারণে জার্মানির রাইন নদীর পানি আশঙ্কাজনক মাত্রায় কমে গিয়েছে। দেশটির শিল্প খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাইন নদীর পানি হ্রাসের রেকর্ড দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ডয়চে ভ্যালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপজুড়েই এবার দাবদাহ বয়ে গিয়েছে। তার জেরে কোথাও অনাবৃষ্টি, কোথাও খরা আবার কোথাও নদীর পানি কমে গিয়েছে ইতিহাসের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। গরম শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে রাইন নদীর পানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো দেশের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ নদী দিয়ে আগের মতো পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে পণ্যবাহী জাহাজগুলো চলতে পারবে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড।

ফেডারেশন অব জার্মান ইন্ডাস্ট্রিজের (বিডিআই) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হলগার লশ বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে আরো খারাপ অবস্থার জন্য তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘায়িত শুষ্ক মৌসুম এবং পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে শিল্প খাতের সরবরাহ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এরই মধ্যে কোম্পানিগুলো ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

রাইন নদীর পানি কমে যাওয়ায় অনেক স্থানেই আর পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। এখন এসব পণ্য যদি রেল বা সড়কপথে স্থানান্তর করার প্রয়োজন হয় তবে তা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ সব স্থানে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে যে ট্রাকগুলো ব্যবহূত হয় সেগুলো চালানোর মতো পর্যাপ্তসংখ্যক চালকও পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ কেবল রাইন নদীর পানি কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের সংকট তৈরি হবে।

হলগার লশ আরো বলেন, সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যখন পেট্রোলিয়াম এবং নির্মাণ খাতের সামগ্রীগুলো নির্ধারিত স্থানে পৌঁছতে পারবে না। রাসায়নিক ইস্পাত কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হবে কিংবা ভারী শিল্প উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পণ্যগুলো আর পরিবহন করা যাবে না।

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন দেখা দেয়ায় কয়েক মাস ধরেই জার্মানির শিল্প খাতে বেশ ধীরগতি দেখা দিয়েছে। জ্বালানি পরিস্থিতির সময়ে যদি রাইন নদী দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে কয়লা গ্যাসোলিন পরিবহন না করা যায় তাহলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে বলে সতর্ক করেন কর্মকর্তা।

প্রশ্ন উঠতে পারে, রাইন নদী আসলেই কি জার্মানির অর্থনীতির জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে নিঃসন্দেহে জবাবটি হবে হ্যাঁ। সুইজারল্যান্ডের আলপাইন অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হওয়া নদী জার্মানির শিল্পাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র হয়ে নর্থ সিতে পড়েছে। পথ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শস্য, রাসায়নিক কয়লার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য।

উৎপাদক রফতানিকারকদের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে রাইন নদী। বিশেষ করে উৎপাদকদের সঙ্গে রটারডাম আমস্টারডাম বন্দরের মতো বৈশ্বিক রফতানি টার্মিনালগুলোর যোগসূত্র ঘটায়। এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকা বিভিন্ন খাল নদীর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করা হয়। যেখান থেকে পণ্য চলে যায় সোজা কৃষ্ণসাগর পথে।

গুরুত্বপূর্ণ নদীর জাহাজ চলাচলের পথে পানির গভীরতা ফুট ইঞ্চিতে পৌঁছেছে। যার কারণে জাহাজ চলাচল করতে পারলেও আগের চেয়ে কম পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন