বেশ কিছুদিন ধরেই ভোক্তা চাহিদায় কিছুটা মন্দা মোকাবেলা করছে মার্কিন অর্থনীতি। এ অবস্থায় জুলাইয়ে দেশটির খুচরা ব্যবসা খাতের গতি অত্যন্ত ধীর হয়েছে। মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি উচ্চ সুদহার বেশির ভাগ মার্কিনের খরচের পরিমাণ কমিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। তবে গ্যাসোলিনের দাম কমলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। কিন্তু আদতে সেটি হয়নি।
এপির খবর অনুসারে, জুনে দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিললেও জুলাইয়ে এসে তা অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও দেশটির অর্থনীতিবিদরা আরেকটু উন্নতির আশা করেছিলেন। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায় ধীরগতি থাকলেও কিছু ইতিবাচক বিষয় ঘটেছে। যেমন গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের খুচরা বিক্রি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
এর জন্য গ্যাসের দাম কমে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে কিছু অর্থ উদ্বৃত্ত থাকছে। এলপিএল ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেফরি রোচ বলেন, যেহেতু গ্যাসের দাম কমেছে, তাই ফার্নিচার বা ইলেকট্রিক সামগ্রী কেনার জন্য সাধারণ মানুষের হাতে বাড়তি অর্থ থাকছে। পাশাপাশি বেড়েছে বাগান করার সামগ্রীর বিক্রিও।
একই সময়ে ভোক্তারা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর দিকে বেশ সতর্ক ছিলেন। যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে ডিপার্টমেন্টার স্টোর ও কাপড়ের দোকানগুলোর বিক্রিতে। জুলাইয়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রি কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং কাপড়চোপড় খাতের বিক্রি কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
ঠিক এক বছর আগের সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে সব মিলিয়ে জুলাইয়ে খুচরা বিক্রি বেড়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি প্রায় ৭০ শতাংশ নির্ভর করে দেশটির জনগণের খরচের ওপর। গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি চলাকালেও ভোক্তা ব্যয় বেশ স্থিতিশীল অবস্থাতেই ছিল। এমনকি যখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মর্টগেজ ও ঋণের সুদের হার অনেক বেশি ছিল তখনো।
তবে সব মিলিয়ে এখনো ভোক্তা ব্যয় খুব বেড়েছে তা বলা যাবে না। নিউইয়র্কের অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ ক্যাথি বলেন, যেহেতু দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, তাই ক্রেতারা ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। একটি শক্তিশালী শ্রমবাজার এবং বলিষ্ঠ ভোক্তা ব্যয় এ অর্থনীতিকে মন্দার কবল থেকে রক্ষা করতে পারে।
সরকারের মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুচরা ব্যবসার এক-তৃতীয়াংশই হলো ভোক্তা ব্যয়। সেখানে পরিষেবা খাতের খরচ, উড়োজাহাজ ভাড়া, বাড়ি ভাড়া, সিনেমা দেখার খরচ বা চিকিৎসকের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গত কয়েক মাসে মার্কিনরা বস্তুগত সামগ্রী কেনার চেয়ে ভ্রমণ খাতে বেশি ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ যাতায়াত, উড়োজাহাজ ভাড়া, হোটেলের ভাড়া এসব খাতে ব্যয় বেড়েছে।