গার্ডার দুর্ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে প্রাইভেট কারের পাঁচ যাত্রী নিহতের ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। গতকাল আইনজীবী জাকারিয়া খানের পক্ষে আইনজীবী এবিএম শাহজাহান আকন্দ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন।

আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ জানান, রিটে নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ কোটি টাকা করে মোট কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিআরটি প্রকল্পে গত পাঁচ বছরে কী ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তলব করার আদেশ চাওয়া হয়েছে। একইভাবে দেশের সব উন্নয়ন প্রকল্পে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

১৫ আগস্ট বিকালে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের একটি গার্ডার পড়ে নিহত হন প্রাইভেট কারের পাঁচ যাত্রী। আহত হন আরো দুজন। হতাহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। ঢাকায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান শেষ করে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন তারা। নিহতরা হলেন হূদয়ের বাবা রুবেল (৬০), রিয়ার মা ফাহিমা (৪০), ফাহিমার বোন ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত () জাকারিয়া ()

এদিকে, গার্ডার পড়ে নিহত চারজনের দাফন জামালপুরে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মেলান্দহ উপজেলার আগপয়লা গ্রামের জাহিদুলের বাড়ির সামনে জানাজা শেষে নিহত ঝরনা বেগম তার দুই সন্তান জান্নাত জাকারিয়ার দাফন পারিবারিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে রাত ১২টার দিকে নববধূ রিয়া মনির মা ফাহিমার দাফন জেলার ইসলামপুর উপজেলার ঢেংগার এলাকায় সম্পন্ন হয়েছে। জানাযায় শত শত মানুষ অংশ নেয়।

গত বৃহস্পতিবার নিহত ঝরনা বেগম স্বামী দুই সন্তান নিয়ে ভাগ্নি রিয়া মনির বিয়ের অনুষ্ঠানে যায়। শনিবার ভাগ্নি রিয়া মনির বিয়ে হয় দক্ষিণখান কাওলা এলাকার হূদয়ের সঙ্গে। সোমবার কাওলা এলাকা থেকে বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে দুই সন্তান, বড় বোন নিহত ফাহিমা, ভাগ্নি রিয়া মনি, জামাই হূদয় হূদয়ের বাবা রুবেলসহ আশুলিয়ায় যাওয়ার পথে উত্তরা প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনের সড়কে ক্রেন থেকে চলন্ত গাড়ির ওপর গার্ডার পড়ে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান।

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান গতকাল সকালে মাহমুদপুর ইউনিয়নের আগপয়লা গ্রামের বাসিন্দা নিহত ঝরনা বেগমের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। সময় তারা শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। তাদের কোনো আর্থিক সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেন তারা। 

বিআরটি প্রকল্পে এর আগেও ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের ১৪ মার্চ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক সামনে ক্রেন ভেঙে লঞ্চিং গার্ডারের সামনের অংশ ভেঙে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে থাকা ছয় শ্রমিক আহত হন। ক্রেন ভেঙে পড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে একই প্রকল্পে ঘটে আরেকটি দুর্ঘটনা। আব্দুল্লাহপুরে একটি ফ্লাইওভারের পিয়ার ক্যাপ ধসে পড়ে। তবে সে সময় ঘটনায় কোনো হতাহত হয়নি।

২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায় বিআরটি প্রকল্প। নানা জটিলতা পেরিয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। নির্মাণ শুরুর পর থেকেই যানজট, জলাবদ্ধতা, নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে সমালোচিত হয়েছে প্রকল্পটি। বিআরটি প্রকল্পের মাধ্যমে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাসের জন্য বিশেষায়িত একটি লেন তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ লেনে বিআরটি কোম্পানির বাস ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলবে না। ২০ কিলোমিটার বিআরটি লেনের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের মাঝ বরাবর সড়কের সমান্তরালে। বাকি পাঁচ কিলোমিটার উড়ালপথে। সড়ক জনপথ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাসের জন্য বিশেষায়িত লেনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন