আমদানি কমছে ,ইতিবাচক ধারায় বৈদেশিক বাণিজ্য

হাছান আদনান

দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে আমদানির লাগাম টেনে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা শর্ত আর ডলার সংকটে আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা থেকে দেশের অনেক ব্যাংকও হাত গুটিয়ে নিয়েছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানি বাণিজ্যে। জুলাইয়ে বিলিয়ন ডলার কমার পর আগস্টেও এলসি খোলা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুনে আমদানির জন্য ৭৬৭ কোটি বা দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। জুলাইয়ে এলসি দশমিক বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর আগস্টের প্রথম ১১ দিনে দেশে এলসি খোলা হয়েছে ১৬১ কোটি ডলারের। জুলাইয়ের প্রথম ১১ দিনে ২৫৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। সে হিসেবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টের প্রথম ১১ দিনেই এলসি খোলা কমেছে ৯৪ কোটি ডলারের।

চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম দিন থেকে আমদানি কমলেও রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশের রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১২ শতাংশ বেড়েছে। চলতি আগস্টেও রফতানি রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। রেকর্ড সৃষ্টি করা আমদানি ব্যয়ের প্রভাবে ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত ডলারের বিপরীতে অবমূল্যয়ন হচ্ছে বাংলাদেশী মুদ্রার। সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করা হলেও টাকার অবমূল্যায়ন থামছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত দর অনুযায়ী প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ১২০ টাকা পর্যন্ত ডলার বিক্রি হচ্ছে।

বৈদেশিক বাণিজ্যে সামঞ্জস্য ফেরাতে চলতি অর্থবছর ২০ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আমদানি ব্যয় কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্যসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের সুফল এরই মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। জুলাইয়ে প্রায় বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় কমেছে। আগস্টের প্রথম ১১ দিনেই প্রায় বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় কমেছে। আশা করছি, অর্থবছর শেষে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার আমদানি কমবে।

রেকর্ড আমদানির পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছর রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতিতেও পড়ে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। রফতানি আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে আমদানি ব্যয় সমন্বয় করে বাংলাদেশ। তবে রেকর্ড আমদানির বছরে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমেছে। কারণে অর্থবছর শেষে সরকারের চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি নিয়ে গত অর্থবছর শেষ হয়েছে।

বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। ২০২১ সালে রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আমদানি দায় পরিশোধ করার জন্য গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে দশমিক বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়। আর চলতি আগস্টের ১১ তারিখ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো ৫৯ কোটি ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।

ডলার বিক্রির পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীল রাখতে আমদানির লাগাম টেনে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এলসি খোলা হয়েছে দশমিক বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে জুলাইয়ে রফতানি আয় রেমিট্যান্স খাতে দশমিক বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। সে হিসেবে জুলাইয়ে ব্যয়ের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। একই ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি আগস্টেও। আগস্টের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসীরা ৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালে আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

আমদানি কিছুটা কমলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সহসা কমবে না বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গত দুই বছরে করোনার কারণে অনেক এলসি দায় পরিশোধ করা হয়নি। মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া ওইসব এলসির দায় এখন পরিশোধ করা হচ্ছে। আগামীতে এসব এলসির দায় পরিশোধের চাপ আরো বাড়বে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এখন শতভাগ মার্জিন সত্ত্বেও ঋণপত্র খুলতে সাহস পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের যে দর নির্ধারণ করেছে, সে দামে বাজারে কোথায়ও ডলার মিলছে না। এজন্য বাধ্য হয়ে রেমিট্যান্স হাউজগুলো থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন