মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সারা দেশে কর্মবিরতি চা শ্রমিকদের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার

দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন দেশের চা শ্রমিকরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা কর্মবিরতিতে গতকাল দেশের দুই শতাধিক চা বাগানে একযোগে ধর্মঘট পালন করেন শ্রমিকরা। কর্মবিরতির পাশাপাশি দফায় দফায় মিছিল সড়ক অবরোধও করেন তারা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত -১২ আগস্ট চারদিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন দেশের সব চা শ্রমিক। চারদিন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালিত হয়। সময় মজুরি বৃদ্ধি মজুরি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা মালিক পক্ষকে সাতদিনের আলটিমেটাম দেন। কিন্তু মালিক পক্ষ সময়ের মধ্যে বৈঠক বা সমঝোতায় না আসায় গতকাল পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।

চা শ্রমিক নেতারা জানান, সাধারণত দুই বছর পরপর চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি হয়ে থাকে। সবশেষ ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। কিন্তু এরপর প্রায় ১৮ মাস পার হলেও নানা টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করছে মালিক পক্ষ।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চা শ্রমিকদের দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি হিসেবে জীবনধারণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে শ্রমিক নেতারা বলেন, টাকায় সংসার চলে না। এজন্য তারা দৈনিক মজুরি ন্যূনতম ৩০০ টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। মজুরি বোর্ড থেকে শুরু করে মালিক পক্ষের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেও বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। উল্টো শ্রমিক নেতারা আলোচনার প্রস্তাব দিলে সেটি নিয়েও সময় ক্ষেপণ করেন বাগান মালিকরা। যার কারণে ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে ৩০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছি আমরা। এর মধ্যে ১১ আগস্ট সমঝোতা বৈঠকের জন্য আমাদের শ্রম অধিদপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আলোচনার জন্য মালিক পক্ষের কেউ উপস্থিত হননি। পরে শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের ২৮ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেন এবং সেই তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানতে রাজি হননি।

শ্রমিকদের আলটিমেটাম মালিক পক্ষ কর্ণপাত না করায় বাধ্য হয়ে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করতে হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল। তিনি বলেন, চা বাগানের সাপ্তাহিক ছুটি জাতীয় শোক দিবসের ছুটিতে আন্দোলন চলবে না। তবে এরপর আবারো ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামবেন তারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের সভাপতি গোলাম মো. শিবলী বলেন, শিগগিরই শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। সেখানে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন