কাউয়াদীঘি হাওরে জলাবদ্ধতা

মৌলভীবাজারে অনিশ্চয়তায় দেড় হাজার হেক্টর জমির আমন চাষ

আফরোজ আহমদ, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওর ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

জলাবদ্ধতার কারণে অনেক বছর আমন চাষ করতে পারেননি মৌলভীবাজার সদর রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলের কৃষক। পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থাপিত কাশিমপুর পাম্প হাউস সংস্কার নতুন পাম্প পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এর পর গত দু-তিন বছর জলাবদ্ধতার সমস্যা ছিল না। এখন ঝামেলাবিহীন আমন চাষ করেছেন হাওরপারের কৃষক। এবারো তৈরি করেছেন বীজতলা। কিন্তু পানি না সরায় এখনো তলিয়ে আছে চাষের জমি। এদিকে বয়স বাড়ছে হালি চারার, রোপণের সময়ও কমে আসছে। এতে কৃষকের উদ্বেগও বাড়ছে। সব মিলিয়ে হাওরটির দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় কৃষক।

জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এরই মধ্যে আন্দোলন নেমেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। তাদের অভিযোগ, মনু সেচ প্রকল্পের আওতায় কাশিমপুরে স্থাপিত পাম্প হাউজ ২৪ ঘণ্টা চালু না থাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে হাওরসংলগ্ন সদর উপজেলার আখাইলকুরা একাটুনা ইউনিয়নের একাংশ এবং রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর, উত্তরভাগ, মুন্সীবাজার, পাঁচগাঁও রাজনগর ইউনিয়নের একাংশের কৃষক মাঠে নামতে পারছেন না।

একাটুনা এলাকার কৃষক মাসুদ আহমেদ মাফিক মিয়া বলেন, আমন চাষের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও তারা জমি চাষ করতে পারছেন না। কেননা মাঠের পর মাঠ পানিতে তলিয়ে আছে। আমন চাষ নিয়ে শঙ্কিত এখন হাওরপারের চাষীরা।

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমেদ বলেন, সেচপাম্প সার্বক্ষণিক চালু না থাকায় এবং অতিবৃষ্টির কারণে হাওরে পানি বেড়েছিল। তবে এখন পানি কিছুটা কমেছে।

তিনি আরো বলেন, পুরোপুরি হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাশিমপুর পাম্প হাউজ ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন কৃষক। ২১ জুলাই ১১ আগস্ট জেলা শহরে মানববন্ধন বিক্ষোভ হয়েছে। স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। পরে জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ১০ দিনের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে, এখন দেখা যাক কী হয়।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ জানান, আমনের মৌসুম শেষের দিকে। সময়মতো রোপণ করতে না পারায় হালি চারার বয়স হয়ে যাচ্ছে। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে হাওরের পানি না নামলে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাবে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, কাশিমপুর পাম্প হাউজের আটটি পাম্প একসঙ্গে চালাতে প্রয়োজন তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে দশমিক মেগাওয়াট। তখন একটি পাম্প চালানো যায়। রাত ১০টার পর লোড বাড়ে। তবে রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত আটটি পাম্পই চালানো হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) এমএ হান্নান খান জানান, বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে সব পাম্প চালু করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের জোগান অনুযায়ী মেশিন চলছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানায়, আগামী ১০ দিন কাশিমপুর পাম্প হাউজে রাত ১১টা থেকে পরদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত সব পাম্প সচল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

জলাবদ্ধতা থেকে হাওরে উৎপাদিত বোরো ফসল রক্ষা এবং বর্ষা মৌসুমে হাওরের বর্ধিত পানি বের করে হাওরসংলগ্ন এলাকায় আমন জমিতে চাষাবাদ উপযোগী করতে ১৯৮৩ সালে কুয়েত এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে জেলার রাজনগর উপজেলায় কাশিমপুর পাম্প হাউজ স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর থেকে কাউয়াদীঘি হাওরে বোরো আমন চাষাবাদ অব্যাহত ছিল। একপর্যায় কয়েকটি মেশিন নষ্ট হয়ে গেলে ২০১৯ সালে ৮৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন মেশিন স্থাপন করা হয়। ফলে বিগত বছরগুলোয় আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন