নওগাঁ কাঁকনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

শিক্ষকের অনিয়মের তদন্তকালে অভিযোগকারীর ওপর হামলা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নওগাঁ

নওগাঁয় কাঁকনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত চলাকালে অভিযোগকারীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জেলার সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাঁকনসী গ্রামে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনেই হামলা হয়েছে। হামলায় গুরুতর আহতাবস্থায় আমিনুল ইসলাম (৩৩) নামে এক অভিযোগকারী নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তদন্ত পিছিয়ে অভিযোগকারীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সরেজমিনে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাঁকনসী গ্রামে কাঁকনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ১৮ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। অভিযোগের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শুরু হচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার বণিক বার্তায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এর পরই নড়েচড়ে বসে শিক্ষা বিভাগ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সেখানে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর সভাপতি আব্দুল হান্নানসহ বিদ্যালয়টির অভিভাবক সদস্যরাও উপস্থিত হন। অভিভাবক সদস্যদের এক করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাদের অভিযোগ শুনছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ওই মুহূর্তে অভিভাবক সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম এবং অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বর্ণনা দিতে শুরু করলে তার মাথায় একটি ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। সেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন আমিনুল ইসলাম। পরে বাকি অভিভাবক সদস্যদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে ছুটে যান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই এলাকার শাহীনুর, লতিফ, ইদুলসহ অনেকেই বলেন, প্রধান শিক্ষক একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার। তাই তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয়ে আসামাত্র বহিরাগত যুবকদের বিদ্যালয়ে আনেন তিনি। পাশাপাশি সভাপতি তার পরিবারের লোকদের এনে মাঠে অবস্থান করেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমাদের কাছে অভিযোগের বিস্তারিত শুনছিলেন। তাদের সামনেই আমাদের জিভ কেটে নেয়াসহ নানাবিধ হুমকি দিচ্ছিলেন সভাপতি প্রধান শিক্ষক। একপর্যায়ে তারা হামলা চালান।

হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আমিনুল ইসলাম বলেন, সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের নানাবিধ প্রমাণ উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের সামনে উপস্থাপন করছিলাম। ওই মুহূর্তে সভাপতির বড় ভাই আব্দুল মান্নান আকস্মিক আমার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লেও তারা কিলঘুসি মারা অব্যাহত রেখেছিল। গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে সময়মতো হাসপাতালে এনেছে বলে প্রাণে বেঁচে গেছি। মাথায় তিনটা বড় ধরনের সেলাই দিতে হয়েছে।

হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আঞ্চলিক সমবায় ইনস্টিটিউট নওগাঁর কর্মচারী আব্দুল মান্নান বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় গ্রামের বাড়িতে এসেছি। ভাই যেহেতু বিদ্যালয়ের সভাপতি, তাই তদন্ত চলাকালীন মাঠে একটু দেখতে গেছি। সেখানে হঠাৎ করেই আমার ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কাউকে ইট দিয়ে আঘাত করার অভিযোগটি সঠিক নয়।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুর গফুরের মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

নাটোর সমবায় অফিসের কর্মচারী বিদ্যালয়টির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, একটি পক্ষ আমাকে সভাপতি পদ থেকে সরাতে নানা রকম অপপ্রচার করছে। তদন্ত কমিটির সামনে আমরা মার খেয়েছি, কাউকে মারিনি।

তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, তদন্ত চলাকালীন সেখানে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় পাশের পুলিশ ফাঁড়িকে জানানো হয়েছে। পরে পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

নওগাঁ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিয়ারা পারভীন বণিক বার্তাকে বলেন, কাঁকনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়মের তদন্ত চলাকালীন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার বিষয়টি আমি অবগত নই। সেখানে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে প্রশাসনের সহায়তা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন