চার একর জমিতে হচ্ছে ওয়েট স্কেল

হুমকির মুখে যশোরের ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার

আবদুল কাদের, যশোর

যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

যশোর-খুলনা মহাসড়কঘেঁষে সদর উপজেলার রামনগরে অবস্থিত ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার। বিশাল দীঘি আর জীব-বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পিকনিক কর্নারটি একসময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল ছিল। অথচ গত দুদশকের ব্যবধানে এটি অযত্ন আর অবহেলায় পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে পিকনিক কর্নারটির জৌলুস ফেরাতে ভূমিকা না রেখে এখন সামনের অংশ ভেঙে যানবাহনের ওয়েট স্কেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিবহন দাঁড়ানো এবং পার্কিংয়ের ফলে বিপন্ন প্রজাতির পাখ-পাখালি, জীব-বৈচিত্র্য পিকনিক স্পটের আবহ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, সড়ক জনপথ বিভাগের এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করে ছয় দশকের পিকনিক কর্নারটির আধুনিকায়ন করতে হবে। এতে যশোরের  ঐতিহ্যবাহী স্থানটি যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি সুস্থ বিনোদনের স্থানটির কদরও বাড়বে।

সড়ক জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে অবাঙালি প্রকৌশলী ফারুকির উদ্যোগে ৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যশোরের ঐতিহ্য ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার, যা যশোরবাসীসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে বিশাল দীঘি ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের গাছগাছালি জীববৈচিত্র্য। কিন্তু সড়ক জনপথ বিভাগ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই জৌলুস হারাতে থাকে ক্ষণিকার। অবস্থায় নব্বই দশকে এসে উৎসাহে ভাটা পড়ে দর্শনার্থীর মাঝেও। একপর্যায়ে  ঐতিহ্যবাহী বিনোদন কেন্দ্রটি  ভরে যায় ঝোপঝাড়ে। ২০ বছরের বেশি হয়ে গেছে এখানে আর কেউ পিকনিক করতে যান না। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা এবং পরিবেশবাদীরা বারবার প্রশাসনের পাশাপাশি সড়ক জনপথ বিভাগের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে, যশোরের ঐতিহ্যবাহী পিকনিক কর্নারটির জৌলুস  ফেরাতে ভূমিকা রাখতে কিন্তু তাদের সে দাবি পূরণ হয়নি।

এখন পার্কটির পশ্চিম পাশের দেয়াল ভেঙে চার একর অংশে বসানো হচ্ছে ওজন স্কেল।  সূত্রমতে, ওয়েট স্কেল নির্মাণের জন্য চলতি মাসেই কার্যক্রম শুরু হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর কবির  বলেন, অযত্ন-অবহেলায় ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আর কেউ যান না সেখানে। অবস্থায় তারা চান আবারো তার জৌলুস ফিরে পাক ক্ষণিকা। সংস্কার করলে এটি আবারো দর্শনীয় হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশা করেন।

বিষয়ে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার যশোরবাসীর ঐতিহ্য। এখানে নানা জাতের গাছগাছালির সঙ্গে বিভিন্ন পাখির অভয়ারণ্য। যেখানে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার নির্দেশ দিচ্ছেন, সেখানে সড়ক জনপদ বিভাগ না করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সড়ক জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, ক্ষণিকা পিকনিক কর্নারের জীব-বৈচিত্র্য যাতে নষ্ট না হয়, সে কারণেই সব জমি নেয়া হচ্ছে না। পিকনিক কর্নারটি চালু করতে আমরাও আগ্রহী। আর্কিটেক্ট দ্বারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এটিকে একটি আধুনিক পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন