সিলেটে উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে মরিয়া মার্কেট ও ভবন মালিকরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

সিলেট নগরীতে সিটি করপোরেশন (সিসিক) এবং সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চলমান অভিযানে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে তিন-চারটি বহুতল ভবন। কিছু ভবন ভাঙার কাজ চলমান রয়েছে। অবস্থায় উচ্ছেদ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভবন মার্কেট মালিকরা। অন্যদিকে অভিযান অব্যাহত রাখতে অনড় সওজ সিসিক।

জানা গেছে, আম্বরখানা কুমারগাঁও সুনামগঞ্জ সড়কের দুই পাশে সওজের জায়গা দখল করে বহুতল ভবন মার্কেট গড়ে তুলেছেন দখলদাররা। অনেকই ছড়া দখল করে গড়ে তুলেছেন মার্কেট। সিটি করপোরেশন থেকে বারবার নোটিস দিলেও সংশ্লিষ্ট স্থাপনা মালিকরা তাতে কর্ণপাত করেননি। এতে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে ওই এলাকায় তীব্র জলাদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অল্প বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় পুরো এলাকা। এছাড়া ওই এলাকায় বেশকিছু অবৈধ স্থাপনার কারণে সড়কের প্রশস্তকরণ ড্রেনেজ নির্মাণকাজ বিঘ্নিত হচ্ছিল। অবস্থায় সওজ সিসিক যৌথভাবে গত ২৮ জুলাই  থেকে নগরীর পাঠানটুলা-মদীনা মার্কেট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এদিন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা জামান ভিউসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা মার্কেট বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু হয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা জামান ভিউ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। পাশের আরো দু-তিনটি ভবন ভাঙার কাজ এখনো চলমান। এছাড়া অভিযানে সড়কের জায়গায় গড়ে তোলা একাধিক গেট সীমানাপ্রাচীরও উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এছাড়া বারবার নোটিস দিয়ে স্বেচ্ছায় ভবন বা মার্কেটের যে অংশটি সওজের জায়গায় পড়েছে তা ভেঙে ফেলার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তবে তা আমলে নিচ্ছেন না ভবন বা মার্কেট মালিকরা। অন্যদিকে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখতে অনড় রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে ভবন তথা মার্কেট মালিকরা উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। এরই মধ্যে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাট্টা করে উচ্ছেদ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। গত ১০ আগস্ট রাতে মার্কেট মালিকরা সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় একটি সভাও করেছেন। চেষ্টা করছেন এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ ঠেকানোর।

মদিনা মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুর রাজ্জাক খাঁনের ছেলে আল মদিনা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির মোতোওয়াল্লি খলিলুর রহমান খাঁন দাবি করেন, ১৯৭২-৭৩ সালের যে প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় সে প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ওই জমি সংশ্লিষ্ট মালিকদের  ফেরতও দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে ফরমালিটি করেননি, দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমানি সেন্টার, ওয়ালটন, হাতিমতাই, কামরুল ম্যানশন, খালিক ম্যানশন, খানবাজার ফলের মার্কেট এবং মসজিদের ভূমি অবমুক্ত করা আছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেখানেও সওজ সিটি করপোরেশন কর্তৃক লাল দাগ দেয়া হয়েছে। শুধু দাগ দিয়ে নয় তারা বুলডোজার নিয়ে ভাঙার জন্য হাজির। এটাকে অন্যায়, বেআইনি, অমানবিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন তিনি।

মদিনা মার্কেটের হিরণ মিয়া মার্কেটের মালিক ইউপি চেয়ারম্যান হিরণ মিয়া বলেন, সিসিক সওজ নিয়মনীতি না মেনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। সড়ক উন্নয়নের প্রয়োজন হলে আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে।

সড়ক জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি সওজের ভূমি উদ্ধার অভিযান। দেশের স্বার্থে অভিযান চলছে।

অভিযান প্রসঙ্গে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেই নগরী ডুবে যায়। ছড়া নালা দখল করে ইচ্ছামতো মার্কেট ভবন করেছেন। সড়কের পাশের জায়গা দখল করে আছেন। সওজ সরকারি জমি উদ্ধার করছে। সিটি করপোরেশন এতে সহায়তা করছে। জলাবদ্ধতা হলেই সিসিকের দোষ। আমরা সওজকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নেমেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন