জয়পুরহাটে বারোমাসি তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

মাশরেকুল আলম, জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে বারোমাসি তরমুজ খেত পরিচর্যা করছেন কৃষক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

জয়পুরহাটে তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষীরা। কম খরচে অধিক লাভ আর বারোমাস  ফলন হওয়ায় তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন অনেক চাষী। মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল কুঁড়ি আসে। আর ৭০-৮০ দিনে পরিপক্ব হয়ে মাচার ডগায় ডগায় ঝুলে পড়ে হলুদ রঙের তরমুজ। তরমুজের ভেতরে লাল। মিষ্টি, রসালো সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তরমুজচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তরমুজ চাষের জন্য প্রথমে মাচা, বেড, সুতা, বাঁশসহ অন্যান্য খরচ হয় প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর তরমুজ বিক্রি হয় লাখ ১০- লাখ ৩০ হাজার টাকা। এতে কৃষকের লাভ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। একই মাচায় এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে তেমন কোনো খরচ নেই।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা গোপালপুর গ্রামের রাজু মিয়া ৩৩ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষে মোট ৪০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৯০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচ বাদে লাভ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।

বরেন্দ্রভূমি হিসেবে খ্যাত কালাই উপজেলায় উদয়পুর ইউনিয়নের বহুতিদর্গাপাড়া গ্রামের বর্গাচাষী এনামুল হক ৩৩ শতাংশ উঁচু জমিতে তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ চাষ করে সফল কৃষকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে হাজার ৩০০টি তরমুজের বীজ বপন করেন জুনের শেষের দিকে। তরমুজের জমিতে নিয়মিত পরিচর্যায় আর পরিশ্রমের ফলে তার মাচায় এখন তরমুজ ঝুলছে ছোট-বড় বেশ কয়েক শ। তরমুজের খেত দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার লোকরা। আবার কেউ কেউ তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন জমি থেকে। অসময়ের তরমুজ বাজারে প্রথমের দিকে বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। বর্তমান বাজার ৪০-৫০ টাকা কেজি।

তরমুজচাষী এনামুল হক আরো বলেন, ৩৩ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২২টি বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে রাখি। এরপর ২৪ জুন ১৮ ইঞ্চি পরপর তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের বীজ বপন করি। বীজ বপনের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায় এবং এরপর থেকে ফুল ফল আসে।

তরমুজ খেত দেখতে আসা নুরুল মিয়া, আব্দুল খালেক, বাবু, আলমসহ একাধিক স্থানীয় কৃষক বলেন, অসময়ে তরমুজ চাষ হচ্ছে এবং এর ফলনও বেশ ভালো। এছাড়া স্বাদ গুণগতমান ভালো হাওয়ায় এখন অনেকেই আগ্রহভরে তরমুজ চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন। এনামুলের মতো তারাও এখন ভাবছেন, জাতের তরমুজ চাষ করবেন।

২০১৮ সালে সর্বপ্রথম জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা মাত্র আড়াই শতক জমিতে মাচায় ব্ল্যাকবেরি মধুমালা তরমুজ চাষ শুরু করেন। মাত্র হাজার টাকা খরচ করে তরমুজের চাষ করে ৭০ দিনে লাভ হয় ২২ হাজার টাকা। তার সাফল্য দেখে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ চাষ ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক . . মেফতাহুল বারি জানান, জয়পুরহাটে চলতি মৌসুমে ৪০০ বিঘারও বেশি জমিতে এবার মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে। ইয়েলো গ্রিন, ব্ল্যাকবেরি, মধুমালা জেসমিনসহ কয়েক জাতের তরমুজ চাষ এখানে হচ্ছে। জেলায় কৃষক ধান আলু চাষ করতে বেশি আগ্রহী। ধান আলুর পরিবর্তে অধিক লাভের আশায় তারা এখন তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। সফল হওয়ায় তরমুজ চাষ নিয়ে এলাকার কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন