আয়নাবাজি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের হলে ফিরিয়েছিলেন গুণী নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। প্রথম সিনেমা দিয়েই দর্শকদের মুগ্ধও করেছিলেন তিনি। এরপর লম্বা সময় কেটে গিয়েছে। নির্মাণের কাজ চলমান থাকলেও সিনেমা নির্মাণ করেননি তিনি। এরপর অমিতাভ রেজা পরিচালনা করেন তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘রিকশা গার্ল’। সিনেমাটির ট্রেলার থেকেই প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা পায় রিকশা গার্ল। ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মিতালি পারকিন্সের কিশোর সাহিত্য ‘রিকশা গার্ল’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটি একাধিক দেশে প্রদর্শিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসকট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জুরি অ্যাওয়ার্ড বিভাগে বেস্ট ন্যারেটিভ ফিচার ফিল্মের পুরস্কার জিতেছে অমিতাভ রেজা পরিচালিত সিনেমা রিকশা গার্ল। যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসকট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, জার্মানির ‘শ্লিঙ্গেল ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছে এ সিনেমা।
আন্তর্জাতিক গণ্ডিতে আলোড়ন তুললেও এখনো দেশের মানুষের কাছে অদেখা রিকশা গার্ল। কবে মুক্তি পাবে এ মিনেমা তা নিয়ে দর্শকের আগ্রহের শেষ নেই। তবে এবার সুখবর দিলেন পরিচালক অমিতাভ রেজা নিজেই। তিনি জানালেন, ‘রিকশা গার্ল সিনেমাটি দেশে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে সিনেমাটা সেন্সরে জমা দেয়ার কাজ চলছে। আমরা অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করেছি। আমরা সিনেমাটি শিগগিরই মুক্তি দেব। তবে সিনেমাটা কবে মুক্তি পাবে এটা নিয়ে এখন কিছু ঠিক করা হয়নি। আগে এটা সেন্সর বোর্ডে যাক। ছাড়পত্র পাওয়ার পর প্রযোজক সিদ্ধান্ত নেবেন।’
রিকশা গার্লের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। এতে আরো অভিনয় করেছেন চম্পা, মোমেনা চৌধুরী, নরেশ ভূঁইয়া, অ্যালেন শুভ্রসহ অনেকে। নাইমার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। তার মায়ের চরিত্রে দেখা যায় মোমেনা চৌধুরী ও বাবার চরিত্রে নরেশ ভূঁইয়াকে।
রিকশা গার্ল মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে। যাতে উল্লেখ আছে, রিকশা গার্ল সিনেমাটি এফডিসিতে তালিকাভুক্ত হয়ে এফডিসির কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করেছে এবং এ সিনেমার কাছে এফডিসির কোনো পাওনা নেই বিধায় অনাপত্তি দেয়া হয়েছে।
সেন্সর বোর্ডে সিনেমা জমা দেয়ার জন্য কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। এর মধ্য অন্যতম হলো এফডিসি থেকে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ। মূলত সিনেমা নির্মাণের জন্য এফডিসির কারিগরি সহায়তা নিয়ে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কি হয়নি সেটাই উল্লেখ থাকে এ অনাপত্তিপত্রে।
গত বছর মুক্তির আগে প্রকাশ পায় রিকশা গার্লের ২ মিনিটের ট্রেলার। সিয়াম-পূজার পোড়ামন টু সিনেমার গানের দৃশ্য দিয়ে ট্রেইলার শুরু করে। এরপর অদ্ভুতভাবে ফোকাস করে ক্যামেরার ফ্রেমে দেখানো হয়েছে রিকশা গার্লের কেন্দ্রীয় চরিত্র নাইমাকে। ট্রেইলারজুড়ে দারুণ এক গল্প তুলে ধরা হয়েছে নিপুণভাবে। ক্যামেরার কাজ আর রঙের ব্যবহার মুগ্ধ করেছে সিনেমাপ্রেমীদের। ট্রেলারে স্পষ্ট বোঝা যায় হার না মানা নারী নাইমার গল্প নিয়েই ‘রিকশা গার্ল’।
ইংরেজি ভাষার ট্রেলারটি প্রকাশিত হতেই সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন মার্কিন প্রযোজক এরিক জে অ্যাডামস। তিনি ‘রিকশা গার্ল’-এর প্রযোজকও। ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, এটিই আমেরিকা ও বাংলাদেশের প্রথম যৌথ প্রযোজনায় কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। রিকশা গার্ল বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত হয়েছে।
পরিবারের হাল ধরতে অসুস্থ বাবার রিকশা নিয়ে পুরুষবেশে বের হওয়া অদম্য নাইমার গল্পকে কেন্দ্র করে এ সিনেমা। ২০১৯ সালের দিকে সিনেমাটির শুটিং হয়। চলতি বছর দেশের একাধিক স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে এ সিনেমা। মে মাসজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি অঙ্গরাজ্যের ৫২টি শহরে প্রদর্শিত হয় ‘রিকশা গার্ল’। এছাড়া ৮ জুন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রেক্ষাগৃহগুলোয় পর্যায়ক্রমে মুক্তি পায় সিনেমাটি।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার প্রযোজকেরা হলেন জিয়াউদ্দিন আদিল, ফরিদুর রেজা সাগর ও এরিক জে অ্যাডামস। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমার সুবাতাস বইছে। হলমুখী হচ্ছে দর্শক। তাই অনেকের প্রত্যাশা রিকশা গার্ল দেখতে দর্শক ফের হলে ছুটবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা সিনেমাটি মুক্তির।