বদলাচ্ছে কয়লার বৈশ্বিক বাজার বাড়ছে ব্যয় ও প্রতিবন্ধকতা

বণিক বার্তা ডেস্ক

জাপানের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে মজুদ করে রাখা কয়লা ছবি: নিক্কেই এশিয়া

ইউক্রেন সংঘাত রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা কয়লার বৈশ্বিক বাণিজ্যকে নতুন রূপ দিয়েছে। শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো সমুদ্র কিংবা রেলপথে লম্বা রুট ব্যবহার করে অনেক দূর থেকে কয়লার সরবরাহ নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। ফলে জ্বালানিটি অপরিচ্ছন্ন থেকে অপরিচ্ছন্নতর হয়ে উঠছে। হয়ে পড়ছে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। খবর নিক্কেই এশিয়া।

রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ কয়লা রফতানিকারক দেশ। ইন্দোনেশিয়া অস্ট্রেলিয়ার পরই দেশটির অবস্থান। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো এবং জি৭ রাশিয়ার ওপর থেকে জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে ইউরোপের জ্বালানি তেল আমদানি নিষেধাজ্ঞা ২২ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তবে ইউরোপের অনেক ক্রেতার সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। ফলে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব তাত্ক্ষণিক দৃশ্যমান হবে না।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির দেয়া তথ্য বলছে, রাশিয়া ইউরোপের সবচেয়ে বড় কয়লা সরবরাহকারী। দেশটি ইউরোপের বাজারে বছরে প্রায় কোটি ৩০ লাখ টন কয়লা রফতানি করে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ব্লকটিকে মোট আমদানির ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণে নতুন উৎস খুঁজতে হবে।

কয়লাসহ রাশিয়ার জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মূল উদ্দেশ্য দেশটির আয় কমানোর মাধ্যমে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া। এর ফলে রাশিয়া যুদ্ধের ব্যয় সামাল দিতে পারবে না এবং ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটবে, এমনটাই প্রত্যাশা পশ্চিমাদের। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে কয়লার বৈশ্বিক বাণিজ্য নতুন রূপ লাভ করলে তা জলবায়ুর জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। কারণ বাজার পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিয়ে আসতে হবে কয়লা। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বাড়বে কার্বন নিঃসরণ।

গ্রিনপিস জাপানের জলবায়ু জ্বালানি ক্যাম্পেইনার ডেনিয়েল রিড সতর্ক করে বলেন, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে কয়লা নিয়ে এলে তা আরো বেশি পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ বাড়াবে। এর অর্থ হলো জ্বালানি খাত আরো বেশি কার্বন নিঃসরণমুখী হয়ে উঠবে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক প্রবাহে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। গত মে মাসে জাপান রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি ৪৩ শতাংশ কমিয়েছে। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য সরবরাহকারীদের থেকে আমদানি বাড়ানো হয়েছে। গত বছর জাপানের মোট কয়লা আমদানির ১১ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। তবে বছরের এপ্রিলে দেশটি রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি ধীরে ধীরে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া থেকে জাপানে কয়লার জাহাজ আসতে সময় লাগে মাত্র তিনদিন। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া আসতে ১০ দিন এবং অস্ট্রেলিয়া কানাডা থেকে আসতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়। অর্থাৎ জাপানের জন্য রাশিয়ার বাইরে থেকে কয়লা আমদানি অনেক বেশি সময় ব্যয়সাপেক্ষ।

অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, কয়লা বাণিজ্যের গতিপথ পরিবর্তন খুব বেশি সুসংগঠিত হবে না। কিন্তু জ্বালানিটির আমদানি ব্যয় বাড়বে অনেক বেশি।

উড ম্যাকেনজির ভাইস প্রেসিডেন্ট রবিন গ্রিফিন বলেন, সম্ভবত শিগগিরই আমরা বাজার পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তন দেখতে পাব। বর্তমান বাজার তখনকার বাজারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হবে, এখনকার বাজার অনেক গোছানো। কিন্তু তখনকার বাজার এমন হবে না। তখন কয়লাবাহী কার্গোগুলোকে অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পরিবহন ব্যয় বাড়বে কয়েক গুণ। আর এতে করে জ্বালানির দাম লাফিয়ে বাড়বে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন পরিস্থিতিতে রাশিয়া উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো তুরস্কে সিংহভাগ কয়লা রফতানি করবে, যা যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোকে স্থানান্তর করবে। অন্যদিকে ইউরোপ সময় যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আমেরিকা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তাদের কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন