তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ

যুক্তরাজ্যে খরা, ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল

বণিক বার্তা ডেস্ক

দাবানলে পুড়ছে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বনাঞ্চল ছবি: এপি

ইউরোপজুড়ে তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এর জের ধরে ফ্রান্সে নতুন করে দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ দাবানল মোকাবেলায় শুক্রবার গোটা ইউরোপ থেকে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা গিয়ে আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। অবশ্য কেবল ফ্রান্সেই নয়, দাবানলে পুড়ছে পর্তুগালও। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের কিছু অংশে স্মরণকালের ভয়াবহ খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রবল খরা, তীব্র তাপপ্রবাহ দাবানল; প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগের একমাত্র কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই ইউরোপ তীব্র দাবদাহ পরিস্থিতি পার করছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে জার্মানির রাইন নদীর পানির স্তর নিচে নেমে গিয়েছে। শুধু তা- নয়, যুক্তরাজ্যের টেমস নদীর পানিও অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক দ্রুত কমছে।

উচ্চতাপমাত্রা এবং বাজে ধরনের খরার কারণে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গিরোন্ডে এলাকার দাবানল তীব্র আকার ধারণ করেছে। দাবানলের কারণে রাতারাতি পুড়ে গিয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির গাছপালা, বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ।

আগুনের তীব্রতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জার্মানি, রোমানিয়া, গ্রিসসহ আশপাশ এলাকা থেকে অগ্নিনির্বাপক দল এসে ফ্রান্সের পাশে দাঁড়ায়। কারণ একা ফ্রান্সের সক্ষমতা দিয়ে আগুন মোকাবেলা করা কষ্টকর। রোমানিয়ার প্রধান অগ্নিনির্বাপক ক্রিস্টিয়ান বুহাইয়ানু বলেন, দাবানল কোথায় বা কোন দেশে লেগেছে সেটি বড় বিষয় নয়। বড় কথা হলো এটি নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। আর সেটি করতেই আমরা এসেছি।

ফ্রান্সে তৃতীয় দফার দাবদাহ যখন শেষ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল ঠিক সে সময় দাবানলের সূত্রপাত, যার কারণে এরই মধ্যে হাজার ৪০০ হেক্টর বনাঞ্চল পুড়ে গিয়েছে, যার আয়তন যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ শহরের সমান। দৈত্যাকৃতির আগুনে ছাই হয়েছে বহু ঘরবাড়ি।

কেবল ফ্রান্সই নয়, ভয়াবহ দাবানল দেখেছে পর্তুগালও। সাতদিনের বেশি সময় ধরে জ্বলা আগুন নেভাতে কাজ করছেন দেড় হাজারের বেশি অগ্নিনির্বাপক কর্মী। সঙ্গে আছে পানি বর্ষণকারী ১৩টি উড়োজাহাজ, যার মধ্যে একটি পাঠিয়েছে স্পেন সরকার। আগুনে পুড়েছে সেরা দ্য এস্ট্রেলা ন্যাশনাল পার্কের প্রায় ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার হেক্টর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে জার্মানি যুক্তরাজ্য খরা সমস্যায় জর্জরিত। জার্মানির রাইন নদীর পানির এতটাই কমে গিয়েছে যে অনেক স্থানে নৌযানগুলোও চলাচল করতে পারছে না, যার রেশ পড়ছে বাণিজ্য পণ্য পরিবহনে। আবার যুক্তরাজ্যের উত্তরাংশে তীব্র দাবদাহের কারণে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ, মধ্য পূর্ব ইংল্যান্ডের অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিকভাবে খরা পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে ব্রিটিশ সরকার।

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৩৫ সালের পর এমন ভয়াবহ খরা আর সৃষ্টি হয়নি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে জুলাইয়ে ৩৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। মুহূর্তে যুক্তরাজ্য ওয়ালস চার দিনব্যাপী ভয়াবহ গরমের মধ্যে রয়েছে। এখন পর্যন্ত নাগরিকদের কাছে সঠিকভাবে পানি পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর মানুষকে পানির অপচয় কমাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এর আগে কিছু কিছু স্থানে হোসপাইপ ব্যবহার করে গাড়ি ধোয়া বা বাগানে পানি দেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়, ফ্রান্সেও পানি ব্যবহারে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন