
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) রুশ অর্থনীতি ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) নিম্নমুখী হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে মস্কো।
রুশ পরিসংখ্যান সংস্থা ফেডারেল স্টেট স্ট্যাটিসটিকস সার্ভিস (রোসস্ট্যাট) অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার তথ্য জানালেও বিস্তারিত কোনো বর্ণনা দেয়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোক্তা চাহিদায় পতন এবং নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে রুশ জিডিপি কমে গিয়েছে।
ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানি ও আর্থিক খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে বিদেশে থাকা দেশটির রিজার্ভ আটকে গিয়েছে এবং পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটি থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে।
রাশিয়ার বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যাংক সিনেরা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ সের্গেই কোনিগিন বলেন, জুনের তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, কিছু শিল্পের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার কারণে রুশ অর্থনীতির সংকোচন গুরুতর হয়নি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি সংকোচন প্রত্যাশিত হিসেবে গভীর ছিল না।
রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা প্রথম প্রান্তিকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রসারিত হওয়ার পর এপ্রিল-জুন সময়ে জিডিপি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্লেষকরা এ সময়ে জিডিপি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে জানিয়েছিলেন। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি ৭ শতাংশ কমে যাবে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার শুরু হবে বলেও আশাবাদ জানিয়েছেন সেন্ট্রাল ব্যাংক অব রাশিয়ার বিশ্লেষকরা।
যদিও অস্থির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকারি পূর্বাভাস বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। গত এপ্রিলে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, চলতি বছর রুশ জিডিপি ১২ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেতে পারে। এমনটা হলে ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকোচনে পড়বে দেশটি। ২০২১ সালে দেশটির অর্থনীতি ৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রসারিত হয়েছিল। তবে মস্কোর পাল্টা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গে পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।
এপ্রিলে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, জিডিপি ৪-১০ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে গত মাসে সংকোচনের পূর্বাভাস সংশোধন করে এটি ৪-৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ব্যাংকটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি চেয়ারম্যান অ্যালেক্সি জাবোটকিন বলেন, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জিডিপি সংকোচন শেষ হবে। এরপর অর্থনীতি একটি নতুন দীর্ঘমেয়াদি ভারসাম্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
পশ্চিমা জোটের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও বছরের পর বছর নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বসবাসের অভিজ্ঞতা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রুবল ও মূল্যস্ফীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছে। তাছাড়া জ্বালানির উচ্চমূল্যও রাশিয়াকে উপকৃত করছে। কারণ মস্কো জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান রফতানিকারক। এ কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পুরোপুরি প্রভাব এখন পর্যন্ত আড়াল করতে পেরেছে দেশটি।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক পতন এড়াতে গিয়ে কৌশল অবলম্বন করছে মস্কো। তবে হারানো বিনিয়োগ, বেকারত্ব হার বৃদ্ধি এবং নাগরিকদের আয় কমার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থবিরতা রুশ অর্থনীতিকে গ্রাস করতে পারে।