বৈশ্বিক সফটপাওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ নাম এখন আরব আমিরাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক বিনিয়োগের অন্যতম বড় গন্তব্য হয়ে উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বিশেষ করে দেশটির অন্যতম আমিরাত (রাজ্য) দুবাই এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল হাবগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। মহামারী এর অভিঘাত মোকাবেলায় সফলতা এবং পর্যটন অন্যান্য ব্যবসায়িক খাতের বাধাহীন বিকাশ এখন বৈশ্বিক সফটপাওয়ারের অন্যতম বড় কেন্দ্র করে তুলেছে দেশটিকে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউএই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশটির প্রভাব দিনে দিনে আরো বেড়ে চলেছে।

প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা (সফটপাওয়ার) নিয়ে একটি সূচক প্রকাশ করে থাকে লন্ডনভিত্তিক ব্র্যান্ড ভ্যালুয়েশন পরামর্শক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স। গ্লোবাল সফটপাওয়ার ইনডেক্স শিরোনামে প্রকাশিত সূচকে এবার শীর্ষ ১৫-এর তালিকায় উঠে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নাম। কয়েক বছর ধরেই সূচকে অনেকটাই স্থিতিশীল গতিতে এগিয়েছে দেশটি। সামনের দিনগুলোয় সফটপাওয়ারের দিক থেকে দেশটি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শান্তিপূর্ণভাবে অন্য যেকোনো দেশের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাকে প্রথম সফটপাওয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিল ক্লিনটন প্রশাসনের সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী জোসেফ নাই। এর পর থেকেই বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক, কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বহুল ব্যবহূত একটি পরিভাষা হয়ে উঠেছে সফটপাওয়ার। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, কোনো দেশের শক্তিমত্তা এখন আর শুধু সামরিক দিক থেকে বিবেচনা করা হয় না। একই সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক দিকে থেকে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতাও এখন দেশটির শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাণিজ্যিক অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ইউএইর সফটপাওয়ারও এখন দিন দিন বাড়ছে।

বর্তমান বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের অন্যতম হলো ইউএই, যেখানে সফটপাওয়ারকে শক্তিশালী করতে রীতিমতো রাষ্ট্রীয় কৌশল ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ঘোষিত কৌশলের চারটি অঙ্গ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো অর্থনীতি, পর্যটন, গণমাধ্যম বৈজ্ঞানিক খাতের সমন্বিত লক্ষ্য নির্ধারণ। কৌশলের দ্বিতীয় অংশে জোর দেয়া হয়েছে ইউএইর ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর। এজন্য ইউএইকে মধ্যপ্রাচ্যের গেটওয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে এসে ইউএইকে মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি, কৃষ্টি পর্যটনের রাজধানী হিসেবে উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। সবশেষে একটি আধুনিক সহনশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের সব দেশের মানুষের গন্তব্য হিসেবে ইউএইকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বর্তমানে কৌশলের সুফল হাতে পেতে শুরু করেছে ইউএই। বিশ্বের সব দেশেরই ধনকুবের ব্যবসায়ীদের কাছে এখন আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠেছে ইউএই। বিশেষ করে দুবাইয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে দুবাই বৈশ্বিক আর্থিক খাতের রাজধানী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। একই সঙ্গে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহর হয়ে উঠেছে দুবাই।

বাংলাদেশেও ধনী ব্যবসায়ীদের কাছে দুবাই এখন আর শুধু অবকাশ যাপন কেন্দ্র নয়। একই সঙ্গে বিনিয়োগের নতুন গন্তব্যও। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা দুবাইয়ে তাদের কার্যালয় খুলেছেন। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন বলেও জানা গিয়েছে।

কভিডের প্রাদুর্ভাব দেশটির জন্য অনেকটাই শাপেবর হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, যেসব দেশ সবচেয়ে দ্রুত মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে, তার অন্যতম ইউএই। কভিডের অভিঘাতে বৈশ্বিক পর্যটন খাত মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। অনেক দেশই এখনো অভিঘাত কাটিয়ে পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। ব্যতিক্রম ইউএই। দ্রুত মহামারী নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হওয়ায় দেশটির পর্যটন খাতও অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুত চালু করা সম্ভব হয়েছে।

দেশটির অর্থনৈতিক প্রভাব আরো শক্তিশালী করে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মতো আরব আমিরাতের জ্বালানি তেল বাণিজ্যও এখন বেশ রমরমা হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে মুদ্রাবাজারেও শক্তিশালী হয়ে উঠছে ইউএইর মুদ্রা দিরহাম। ডলারের সংকট কাটাতে বিশ্বের অনেক দেশই এখন রিজার্ভে বিকল্প মুদ্রার সংস্থান বাড়াচ্ছে। এমনকি একের পর এক বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়া রাশিয়াও এখন রিজার্ভে দিরহামের পরিমাণ বাড়াচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ভারতে রুশ জ্বালানি তেলের রফতানি বাড়ছে। বর্তমানে রুশ রফতানিকারকরা রফতানীকৃত পণ্যের মূল্য দিরহামে পরিশোধ করার জন্য ভারতীয় আমদানিকারকদের চাপ দিচ্ছেন। অবস্থায় ভারতীয় আমদানিকারকরাও এখন বিভিন্ন দেশ থেকে ডলারের বিনিময়ে ইউএই দিরহাম সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দিনে দিনে আরো বাড়ছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। বিনিয়োগ পর্যটনের গন্তব্য নিজের আকর্ষণ বাড়াতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে পরিকল্পিত বিনিয়োগ করছে দেশটি। এর সুফলও মিলছে হাতেনাতে। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামনের দিনগুলোয় আরব আমিরাত অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সাংস্কৃতিকভাবে আরো শক্তিশালী হতে যাচ্ছে। গ্লোবাল সফটপাওয়ার ইনডেক্সে শিগগিরই দেশটি শীর্ষ ১০-এর তালিকায় অবস্থান করে নিতে যাচ্ছে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন