আগামী মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন

বাংলাদেশের গ্রিড লাইনে যুক্ত হলো আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র

আবু তাহের

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে আদানি পাওয়ার। এরই মধ্যে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রিড লাইন যুক্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার (পাওয়ার ব্যাকফিড) কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এটি শেষ হলে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আদানির বিদ্যুৎ দেশে আসতে পারে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনক্ষম হয়ে উঠেছে। এখন বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইনের পরীক্ষা চালানো হবে। চলতি সপ্তাহেই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) পরীক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারে। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ দেশে আনা হতে পারে।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়ার মতো সঞ্চালন অবকাঠামো এখনো প্রস্তুত করা যায়নি। যে কারণে প্রথম ইউনিট প্রস্তুত হলেও তার পুরো সক্ষমতা এখনই ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এমন একসময় উৎপাদনে আসতে যাচ্ছে, যখন জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রয়োজনমাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। সংকটের সময়ে আদানির প্রথম ইউনিটের সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেশে আনা গেলে ঘাটতি কিছুটা হলেও কমে আসত।

বিপিডিবি বলছে, শুরুতে প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও সাবস্টেশন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়া হতে পারে। বিদ্যমান সাবস্টেশনে নিয়ে বিদ্যুৎ দেশের উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। এতে আপাতত উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ সংকট নিরসন হবে। এবং ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা যাবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ভারত থেকে হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বিপিডিবি। আদানির প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা গেলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে হাজার ৯৬০ মেগাওয়াটে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো সক্ষমতা (১৪৯৫ মেগাওয়াট) গ্রিডে সরবরাহ হলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াটে, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ।

আদানির বিদ্যুৎ দেশে আনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে এবং বগুড়ায় ৪০০ কেভি দুটি গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে পিজিসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে। সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ এখনো শেষ করা যায়নি। ফলে এখনই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো সক্ষমতা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারবে না।

এর আগে বিপিডিবির একটি সূত্র জানিয়েছিল, জুলাই-আগস্টে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। তবে উৎপাদন শুরু হলেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ কবে আসবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু জানানো হয়নি। অন্যদিকে আদানি পাওয়ারও এখন যাবতীয় জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি শুরু করতে চাইছে।

ঝাড়খণ্ডে নির্মীয়মাণ আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে নিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংকট নিরসনের জন্য বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার। আদানির বিদ্যুৎ দেশে আমদানির জন্য এরই মধ্যে ভারত সীমান্তবর্তী মনাকষা থেকে রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে পিজিসিবি। ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে সংস্থাটি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিপিডিবির এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে পাওয়ার ব্যাকফিডের কাজ শুরু করতে বিপিডিবি পিজিসিবির একটি প্রতিনিধি দল ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সফরের মধ্য দিয়েই সঞ্চালন লাইনে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য ২০১১ সালে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। মূলত চুক্তির লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন বিতরণ খাতে ভারত সরকারের সহযোগিতা বাড়ানো। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে ভারতীয় বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সমঝোতা সই করে বিপিডিবি। এর মাধ্যমে ভারত থেকে হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চুক্তি হয়।

বিপিডিবির সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৭ সালে। ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারিত হয় টাকা ৮০ পয়সা ( দশমিক ৬১ সেন্ট) তবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এখন আর মূল্যে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিপিডিবি-সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন