ডলার লেনদেনে অনুমোদিত ব্যাংক শাখা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমানে শুধু ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনে নিয়োজিত অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখাগুলোতে নগদ ডলার কেনাবেচার অনুমতি রয়েছে। তবে ডলারের বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনতে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ব্যাংক শাখার মাধ্যমে সেবা আরো সহজলভ্য প্রসারিত করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর প্রস্তাবের আলোকে বেশকিছু নতুন শাখাকে শিগগিরই বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমতি দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে শাখাগুলোয় একটি ডেস্কের মাধ্যমে সেবা চালুর অনুমোদন দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য কোন এলাকার কোন শাখায় সেবা চালু করা হবেসে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাবিত তালিকা চাওয়া হবে। তার আলোকেই দেয়া হবে ডলার লেনদেনের শাখার অনুমোদন।

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

জানা যায়, বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের হাজার ২০০ অনুমোদিত এডি শাখায় ডলারের নগদ লেনদেনের অনুমোদন রয়েছে। এর বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকা কয়েকটি বিভাগীয় শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই নগদ ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশী বিদেশী পর্যটকসহ সাধারণ মানুষদের। এছাড়া ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে এনডোর্সমেন্ট বাধ্যতামূলক হলেও খোলাবাজারে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে নগদ ডলারের বাজারে ব্যাংকের তুলনায় মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য বেশি।

দেশে বেশ কয়েক মাস ধরে ডলার নিয়ে অস্থিরতা সংকট চলছে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ডলার সংকটের মাত্রা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিদিনই নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ছে ডলার। গত বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে (কার্ব মার্কেট) প্রতি ডলারের বিনিময় হার পৌঁছেছে ১২০ টাকায়। নিয়ে চলতি সপ্তাহেই ডলারপ্রতি বিনিময় মূল্য বেড়েছে অন্তত টাকা। তবে রেকর্ড পরিমাণ দাম দিয়েও বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

খুচরা বাজারের মতোই পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়েছে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে। সোমবার দেশের প্রথম সারির ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কঠোর ঘোষণার পরও দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম কমেনি। উল্টো বেশি দাম দিয়েও রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে না পেরে দেশের অনেক ব্যাংকে ডলার সংকট বেড়েছে।

খুচরা বাজারে ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত দরের সঙ্গে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি ডলারের দাম ছিল ৯৪ টাকা ৮০ পয়সা। স্বাভাবিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত দরের সঙ্গে খুচরা বাজারে ডলারের মূল্য - টাকা বেশি থাকে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবধান প্রায় ২৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ফলে ডলারের হুন্ডির বাজার আরো বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

চাহিদা তীব্র হওয়ায় ব্যাংক খাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কার্ব মার্কেটেও দাম বাড়ছিল অস্বাভাবিক হারে। গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম ৮৫ থেকে ১০৫ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। তবে মূল্যবৃদ্ধির যে রেকর্ড ছিল তা গত ২৬ জুলাই একদিনেই ভেঙে যায়। ২৫ জুলাই কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ১০৪-১০৫ টাকা বিক্রি হলেও ২৬ জুলাই তা ১১২ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। একদিনেই ডলারের দাম প্রায় টাকা বেড়ে যাওয়ায় তত্পর হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান শুরু করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হয়, ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি পরিদর্শক দল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। অনিয়মে জড়িত থাকায় পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ৪৫টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অব্যাহত তত্পরতায় গত সপ্তাহে দেশের খুচরা বাজারে ডলারের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। তবে সোমবার আবারো ডলারের খুচরা বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এদিন রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান, কারওয়ান বাজারের মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে প্রতি ডলার ১১৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গতকাল ডলারের দাম আরো বেড়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন