মাস
কয়েক আগে
বাড়ানো হলো
গ্যাসের দাম।
মূলত আন্তর্জাতিক
বাজারে জ্বালানি
মূল্যের ঊর্ধ্বগতির
কারণে এমনিতেই
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের
দামের সঙ্গে
লড়াই করে
মানুষের নাভিশ্বাস
ওঠার অবস্থা।
সঙ্গে রয়েছে
রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধের প্রভাব।
এরপর জুলাই
মাসে শুরু
হলো লোডশেডিং।
উদ্দেশ্য পরিষ্কার
এবং বর্তমান
পরিপ্রেক্ষিতে যৌক্তিক
জ্বালানি সাশ্রয়
করতে হবে।
অনেক মানুষ
তা মেনেও
নিয়েছিল। তবে
গত ৫
আগস্ট রাতে
হঠাৎ করে
পেট্রল, কেরোসিন,
ডিজেল ও
অক্টেনের দাম
সর্বোচ্চ ৫২
শতাংশ পর্যন্ত
বাড়ানোয় নিম্ন
ও মধ্যবিত্ত
মানুষ বেশ
বেকায়দায় ফেলে
দিয়েছে।
যেহেতু জ্বালানির
মূল্যবৃদ্ধি নিত্যপ্রয়োজনীয়
পণ্যের দামকে
প্রভাবিত করবে,
তাই গরিব
লোকজন বেশি
ক্ষতিগ্রস্ত হবে
আর নিত্যপ্রয়োজনীয়
দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি
হলে গরিব
মানুষের খুব
কম সুযোগ
থাকে বিভিন্ন
খাতে ব্যয়
সমন্বয় করার।
অতীত অভিজ্ঞতার
আলোকে বলা
যায়, জ্বালানির
উচ্চমূল্যের কারণে,
দ্রব্য এবং
বিভিন্ন সেবার
দাম বেশ
বাড়বে। দরিদ্র
এবং দারিদ্র্যসীমার
কাছাকাছি বাস
করা মানুষদের
কাছে এটাই
এখন সবচেয়ে
মাথাব্যথার কারণ।
বৃহৎ পরিসরে
দেখলে জ্বালানির
মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব
মানুষের আয়ের
ওপরও পড়তে
পারে।
অন্য দৃষ্টিকোণ
থেকে জ্বালানির
উচ্চমূল্য মানুষকে
কম জ্বালানিনির্ভর
কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত
করার কথা।
তবে বাস্তবসম্মত
কারণেই অনেক
সেবার কোনো
বিকল্প নেই
বললেই চলে। উদাহরণস্বরূপ
ঢাকা শহরের
সব গরিব
মানুষ কি
এখন পায়ে
হেঁটে বা
সাইকেল চালিয়ে
গন্তব্যে যাবে?
দুঃখজনক হলেও
সত্যি, ঢাকায়
সাইকেল চালানো
কিংবা পায়ে
হেঁটে দীর্ঘ
পথ চলার
পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা
নেই। কাজেই
কম আয়ের
মানুষজন গন্তব্যে
পৌঁছতে বাসের
ওপর অনেকটাই
নির্ভরশীল কিন্তু
জ্বালানি মূল্য
বাড়ার সঙ্গে
সঙ্গেই বাসের
ভাড়া পুনর্নির্ধারণ
হওয়ায় তাদের
দুর্দশা যে
বাড়বে তা
নতুন করে
বলার প্রয়োজন
নেই।
এদিকে কৃষকদের
অক্লান্ত পরিশ্রম
এবং কৃষি
অধিদপ্তরের ভূমিকায়
বাংলাদেশ অনেকটাই
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ
এ কৃষকদের
অধিকাংশই গরিব
এবং তারা
কৃষিপণ্যের খুব
একটা ন্যায্য
মূল্য পান
না বলেই
শোনা যায়।
দেশে সেচ
ব্যবস্থায় সৌরবিদ্যুৎ
জনপ্রিয়তা পেলেও
অনেক কৃষক
এখনো ডিজেলচালিত
সেচের ওপর
নির্ভরশীল। ৪০
শতাংশেরও বেশি
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি
পাওয়ায় কৃষি
উৎপাদন খরচ
বাড়বে আর
চাহিদা বা
উৎপাদন যা-ই
হোক না
কেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা
তো রয়েছে
সুযোগ নেয়ার
অপেক্ষায়। ফলে
সব শ্রেণীর
মানুষকেই ভুগতে
হবে।
সাধারণত জ্বালানির
মূল্যবৃদ্ধি কিংবা
ভর্তুকি হ্রাস
কয়েকটি ধাপে
করা হয়।
এতে গরিব
ও স্বল্প
আয়ের মানুষ
বিভিন্ন খাতের
ব্যয় সমন্বয়
করতে পারেন।
এবারের জ্বালানির
মূল্যবৃদ্ধি যদি
জরুরি হয়েই
থাকে, তবে
তা কয়েকটি
ধাপে করাটাই
সমীচীন ছিল।
মনে রাখা
জরুরি, করোনার
অভিঘাত এবং
গত ছয়
মাস ধরে
চলা ইউক্রেন
যুদ্ধের প্রভাবে
এমনিতেই গরিব
ও নিম্ন
আয়ের মানুষজন
অসহায় জীবনযাপন
করছে। এ
অবস্থায় জ্বালানির
মূল্য যদি
সহসা না
কমানো যায়,
দরিদ্র ও
নিম্ন আয়ের
মানুষদের জন্য
বিশেষ ব্যবস্থা
নেয়া প্রয়োজন
হবে। নগদ
টাকা দিতে
না পারলেও
টিসিবির মাধ্যমে
স্বল্পমূল্যের সামগ্রী
আরো বেশি
মানুষকে দেয়ার
ব্যবস্থা করলে
উপকার পাওয়া
যাবে। প্রয়োজনে
গ্রামে রেশনের
আওতায় অন্তর্ভুক্ত
গরিব ও
নিম্ন আয়ের
মানুষের সংখ্যা
বৃদ্ধি করা
যেতে পারে।
এ তো
গেল স্বল্পমেয়াদি
সমাধানের কথা।
দীর্ঘমেয়াদে সমাধানের
পথ খুঁজতে
হবে যেটা
বারবার বলা
হচ্ছে, আমাদের
জ্বালানি নিরাপত্তার
দিকে গুরুত্ব
দিতে হবে।
একসময় বিদ্যুতের
বড় অভাব
ছিল। আমরা
তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র
স্থাপন করাতে
গুরুত্ব দিয়েছিলাম।
ভাবা প্রয়োজন
ছিল জ্বালানির
নিশ্চয়তা কোথায়?
আমদানিনির্ভর জ্বালানি
ব্যবস্থা, আমাদের
জ্বালানি নিরাপত্তাকেই
শুধু ঝুঁকিতে
ফেলেনি, আমাদের
বৈদেশিক মুদ্রার
সঞ্চিতিকেও ঝুঁকিতে
ফেলেছে। বেশ
আগেই সৌরবিদ্যুতের
সর্বোচ্চ সুবিধা
পেতে এবং
আমাদের নিজস্ব
গ্যাস আহরণে
ফলপ্রসূ পদক্ষেপ
নেয়া যেত।
প্রশ্ন আসতে
পারে, সৌর
প্যানেল স্থাপনে
আমাদের পর্যাপ্ত
জায়গা আছে
কি? সবকিছু
বাদ দিলেও,
শুধু কল-কারখানা
ও বাণিজ্যিক
ভবনের ছাদ
এবং বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল,
কলেজ ও
সরকারি পতিত
জায়গায় কয়েক
হাজার মেগাওয়াট
ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর
প্যানেল স্থাপন
করা সম্ভব।
ক্রমান্বয়ে কৃষি
উৎপাদনে সৌরবিদ্যুত্চালিত
সেচের ব্যবহার
বাড়াতে পারলে
বিপুল ডিজেল
সাশ্রয় করা
যাবে। সেচের
সময় ব্যতিরেকে
অন্য সময়
যে বিদ্যুৎ
উৎপাদন হবে
তা জাতীয়
গ্রিডে সরবরাহ
করা কিংবা
অন্য কাজে
ব্যবহার করা
যেতে পারে।
জ্বালানি আমদানিতে
হাজার হাজার
কোটি টাকা
ভর্তুকি দিতে
হয়, সে
টাকা
আমাদের সৌরবিদ্যুৎ
উৎপাদন এবং
গ্যাস আহরণে
ব্যয় করে
দেশের সামগ্রিক
জ্বালানি ব্যবস্থার
নিরাপত্তা বৃদ্ধি
করা যেতে
পারে। সে
সঙ্গে জ্বালানি
দক্ষতা বাড়াতে
এবং জ্বালানি
সংরক্ষণে মানুষকে
উদ্বুদ্ধ করতে
নিয়মিত ক্যাম্পেইন
চালাতে হবে।
তবেই আমরা
টেকসই ও
পরিবেশবান্ধব জ্বালানি
নিশ্চিত করতে
পারব। এতে
আমাদের জ্বালানি
ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক
বাজারের প্রভাব
কিছুটা হলেও
কমবে। বেঁচে
যাবে অনেক
বৈদেশিক মুদ্রা
আর সৌরবিদ্যুতের
প্রসার হলে
মানুষের কর্মসংস্থানের
সুযোগ হবে।
পরিশেষে বলতে
হয়, সমস্যার
মাঝেই রয়েছে
সমাধান। গত
এক দশকে
নেয়া বিভিন্ন
পদক্ষেপের ফলে
অতীতে বিদ্যুতের
যে ভয়াবহ
বিপর্যয় ছিল
তা থেকে
আমরা মুক্তি
পেয়েছি ঠিক
তেমনি, এখন
থেকে কাজ
করে গেলে,
জ্বালানি ব্যবস্থাকে
টেকসই এবং
অন্য দেশের
ওপর আমাদের
নির্ভরশীলতাও কমানো
সম্ভব।
শফিকুল আলম: প্রকৌশলী ও পরিবেশ অর্থনীতিবিদ