জন্মদিন পালনের প্রলোভন দেখিয়ে নারী চিকিৎসককে হত্যা

বণিক বার্তা অনলাইন

জন্মদিন পালনের প্রলোভন দেখিয়ে নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিককে হত্যা করেছে তার স্বামী রেজাউল করিম ওরফে রেজা। তারা পরিবারকে না জানিয়ে ২০২০ সালে কাজী অফিসে বিয়ে করে।তবে রেজাউলের বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। আর এ মতবিরোধে জেরে নারী চিকিৎসককে হত্যা করে রেজা।

আজ শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গতকাল রাজধানীর পান্থপথে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামে একটি আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসক হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ঘটনার পর কলাবাগান থানায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। র‍্যাব এ ঘটনার পর থেকেই ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং অপরাধীকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জান্নাতুলের মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায় রেজাউল। সেই মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ রেজাউল জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৯ সালে তাদের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করে। পরিবারের অমতে তার সাথে ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে রেজাউলের বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল— বিষয়টি সম্পর্কে পরবর্তীতে জান্নাতুল জানতে পারে। এ কারণেই তার সাথে প্রতিনিয়ত কথা বাগ-বিতণ্ডা হতো। তারপরও তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে গিয়েছিল জান্নাতুল। মোটিভেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ও সম্পর্ক রাখার জন্য জান্নাতুল কাজ করে আসছিল। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানায়, রেজার মোবাইল এবং সামাজিক আইডি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তার কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা এবং বিকৃত মানসিকতা ছিল। তার সঙ্গে একাধিক মেয়ের সম্পর্ক ছিল। বুধবার  হত্যার উদ্দেশ্যে সে আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায় জান্নাতুলকে। তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল। আজ শুক্রবার জান্নাতুলের জন্মদিন ছিল। জন্মদিন পালন করা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য তাকে সে হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলে রুমে ঢোকার পর তাদের মধ্যে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি হয়। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে রেজা তার সাথে থাকা ব্যাগ থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জান্নাতুলের শরীরে আঘাত করে। তাকে হত্যা করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে ধারালো ছুরিটি ব্যাগে কয়েকদিন ধরে বহন করে আসছিল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যার পর কোনো আলামত তার শরীরে যাতে না থাকে সে জন্য রক্তমাখা জামা পরিষ্কার করে হোটেলে গোসল করে রেজাউল। পরে সেখান থেকে বের হয়ে চলে যায়। ধস্তাধস্তির কারণে সে হাতে কিছুটা আঘাত পায়। হোটেল থেকে বের হয়ে প্রাথমিকভাবে একটি ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তীতে সে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে আত্মগোপন করে। সেখানে এক নিকট আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে অবস্থান নেয়। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার থেকে কীভাবে বাঁচতে পারে সেজন্য আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার চেষ্টা করে সে। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এমবিএ শেষ করে একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেছিল। সেখান থেকে চাকরি চলে যায় পরবর্তীতে বর্তমানে সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। রেজার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানায় র‌্যাব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন