নওগাঁর কাঁকনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষক নয় ঠিকাদারই তার পরিচয়

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নওগাঁ

নওগাঁ সদর উপজেলার কাঁকনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রভাবশালী ঠিকাদার হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয়ে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন তিনি। রুটিনে থাকা ক্লাসগুলো তার পরিবর্তে অনভিজ্ঞ বেকার যুবকদের দিয়ে করানো হয়। এতে নষ্ট হতে বসেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ। বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা প্রাথমিক কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সরেজমিনে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাঁকনসী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত কাঁকনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৮৯ সালের এপ্রিল সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর। যোগদানের ২৪ বছর পর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান। নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত কোনো শিক্ষকের ঠিকাদারি কাজে সম্পৃক্ত থাকার নিয়ম নেই। তবে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন আব্দুল গফুর। কৌশলে স্ত্রীর নামে করিয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নিবন্ধিত ঠিকাদারি লাইসেন্স। কয়েক বছরের মধ্যেই হয়েছেন বিএমডিএর প্রভাবশালী ঠিকাদার। শহরের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তাকে শিক্ষক হিসেবে নয়, চেনেন ঠিকাদার গফুর হিসেবেই। ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান না তিনি। কখনো বিদ্যালয়ে গেলেও সময়মতো পৌঁছানোর রেকর্ড খুবই কম। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইচ্ছামতো বিদ্যালয় পরিচালনায় যাতে কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে, সেজন্য বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যদের না জানিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন তিনি। যেখানে নাটোর জেলা সমবায় কার্যালয়ের কর্মচারী আব্দুল হান্নানকে সভাপতি করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি এভাবে চলতে থাকায় বাকি তিনজন সহকারী শিক্ষকও এখন সময়মতো বিদ্যালয়ে আসেন না। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে সময়মতো শিক্ষকদের না পাওয়ায় পড়ালেখার আগ্রহ হারাতে বসেছে। এর প্রতিকার চেয়ে গত ১৮ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী।

কাঁকনসী গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক মাসে দু-একবার বিদ্যালয়ে আসেন। তাহলে এখানে পড়ালেখা ঠিকভাবে হবে কীভাবে। উনি তো শিক্ষক নন, ঠিকাদার।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর বলেন, ম্যানেজিং কমিটিতে কে সভাপতি হবেন, সেটা এখানকার রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচন করে দেন। আমার জানা মতে, সরকারি অফিসে চাকরি করলেও সভাপতি হওয়া যায়। নিয়ম মেনেই সঠিকভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমার রুটিনে থাকা ক্লাসগুলো কখনই অন্যজনকে দিয়ে করানো হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক নয়।

শিক্ষকতার পাশাপশি ঠিকাদারি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিএমডিএর ঠিকাদারি লাইসেন্স রয়েছে এটা সঠিক। তবে সেটা আমার স্ত্রীর নামে। আমি শুধু কাজগুলো মাঝেমধ্যে দেখভাল করি।

নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বণিক বার্তাকে বলেনবিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে।

একজন প্রধান শিক্ষক কখনই ঠিকাদারির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন