বিশ্ববাজারে চালের দাম কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড মহামারী-পরবর্তী সময়ে সরবরাহ সংকটসহ নানা কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল। সে সময় দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সংকট মোকাবেলায় চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। তবে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ সংকটে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের অনুমতিপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর আমদানিতে আগ্রহ ছিল কম। তবে সম্প্রতি বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য রফতানির বিষয়ে চুক্তি হওয়ার পর বাজার স্থিতিশীল হতে শুরু করে। কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের কারণে শিপিং চার্জ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমলেও আমদানিতে অনীহা দেখাচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিশ্বের প্রধান প্রধান চাল রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম পাকিস্তানের চালের দাম গত এক বছরের তুলনায় কমেছে। এরই মধ্যে সর্বশেষ তিন মাস অর্থাৎ মে থেকে জুলাই পর্যন্ত বৈশ্বিক চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশ এক সময় প্রধান রফতানিকারক চারটি দেশ মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করত। তবে পরিবহন সুবিধা দামের কারণে ভারত থেকে চাল আমদানি হয় সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকটসহ সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

এফএও বলছে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চাল উৎপাদক রফতানিকারক দেশ ভারতের চালের দাম নিম্নমুখী অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশটির শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি বুকিং দর ছিল ৩৯৯ ডলার। সর্বশেষ জুলাইয়ে একই মানের চালের দাম কমে ৩৪৭ ডলারে নেমে এসেছে। এর আগের দুই মাস অর্থাৎ মে জুনে ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া চালের টনপ্রতি দাম ছিল যথাক্রমে ৩৪১ ডলার ৩৪৬ ডলার।

অপরদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ডেও চালের দাম নিম্নমুখী অবস্থায় স্থিতিশীল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশটির -ওয়ান সুপার টু গ্রেডের চালের টনপ্রতি গড় দাম ছিল ৪১৫ ডলার। যদিও মে মাসে দাম বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৩৬ ডলারে এবং জুনে ৪৩৩ ডলারে লেনদেন হয়। তবে সর্বশেষ জুলাইয়ে দাম কমে ৩৯৫ ডলারে নেমে আসে।

তৃতীয় চাল রফতানিকারক ভিয়েতনামে ২০২১ সালে চালের টনপ্রতি দাম ছিল ৪৪৮ ডলার। চলতি বছরের মে মাসে দেশটির শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দাম কমে ৪১৬ ডলারে নেমে আসে। জুনে মানের চালের দাম আরো কমে ৪০৫ ডলার এবং সর্বশেষ জুলাইয়ে টনপ্রতি দাম কমে ৩৯৫ ডলারে লেনদেন হয়েছে।

এছাড়া বর্তমানে তেমন একটা আমদানি না হলেও পাকিস্তানের শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দাম ২০২১ সালে ছিল ৩৯৮ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে ওই মানের চালের দাম টনপ্রতি কমে ৩৬১ ডলার, জুনে ৩৯৬ ডলার এবং সর্বশেষ জুলাইয়ে বিক্রি হয়েছে ৩৮০ ডলারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কভিড পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। তবে এখন কিছুটা নিম্নমুখী। সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যশস্য রফতানির বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পর সংঘাতময় অঞ্চলটি থেকে বেশ কয়েকটি বড় শস্যবাহী জাহাজ গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার পর দাম নিম্নমুখী হয়েছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের চালের বাজারে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন অঞ্চলের গম ভুট্টার ওপর সারা বিশ্বের ২৮ শতাংশ চাহিদা থাকায় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেনের খাদ্যশস্যবাহী জাহাজের চলাচল এভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে বিশ্বের চালের বাজারে দাম আরো কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমলেও বাংলাদেশে চালের দাম আপাতত কমবে না বলেই মনে করছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, সরকার চালের সংকট দাম স্থিতিশীল রাখতে আমদানির অনুমতি দিলেও ডলার সংকট, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্বব্যাপী চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা থেকে কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে দাম আরো কমতে পারে। কিন্তু দেশে ডলার সংকট, এলসি (ঋণপত্র) মার্জিন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপের ফলে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই চাল আমদানি করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণেও চালের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছে। অবস্থায় দেশীয় সংকট মোকাবেলায় আসন্ন আমন মৌসুমের উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন