কক্সবাজার সৈকত জুড়ে তীব্র ভাঙন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কক্সবাজার

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ফুট উচ্চতার জোয়ারে ভাঙছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

কক্সবাজারে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর অস্বাভাবিকভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে। এতে সৈকতজুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে লাবণী পয়েন্ট। এতে পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে ভাঙন ঠেকাতে আপাতত কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গতকাল দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সাগর খুব উত্তাল। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-চার ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পর্যটকদের সৈকতে নামা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঝড়ো হাওয়া বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জোয়ারের পানির আঘাতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক। তীব্র ভাঙনের কারণে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে স্থাপনাটি। জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ লাবণী পয়েন্ট জোয়ারের ঢেউয়ে ব্যাপক ভাঙনের মুখে পড়েছে।

সৈকতের কিটকট (ছাতা) ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, উচ্চ জোয়ারের কারণে প্রতিদিন ছয়বার করে ছাতা সরিয়ে নিয়ে শুকনো স্থানে রাখতে হচ্ছে। এতে পর্যটকদেরও বারবার ছাতা থেকে উঠে পুনরায় আরেক স্থানে বসতে হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে একের পর এক বালিয়াড়ি ভেঙে যাচ্ছে, যার কারণে সৈকতসংশ্লিষ্ট ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে।

লাবণী পয়েন্টে দায়িত্বরত লাইফ গার্ড কর্মী জহির বলেন, এত উচ্চ জোয়ার আর কোনো বছর দেখিনি। বছর সর্বোচ্চ জোয়ারের পানি আঘাত করছে উপকূলে। এতে সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে শুরু করে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বালিয়াড়ি ভেঙে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা। ফলে সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ছে সৈকত। সৈকতে নামতে গিয়ে অনেক সময় আহত হচ্ছেন পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে আসা কলেজ শিক্ষার্থী সোহান বলেন, দলবেঁধে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নেমেছিলাম। জোয়ারের তীব্রতায় জিও ব্যাগ ফেলেও কাজ হয়নি। একই সঙ্গে ইটের রাস্তা ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। ফলে সাগরের নোনাজলে নামতে গিয়ে আহত হয়েছে তাদের দুই বন্ধু।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাসুম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি লিখেছেন, গত পাঁচ বছরে বিপুল অংকের টাকা খরচ করা হয়েছে সৈকত সুরক্ষায়। তার পরও দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার পানি উন্নয়ন বোডের্র কিছু কর্মকর্তার কারণে সৈকতের দুরবস্থা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ওড়িশা উপকূল তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট আকারে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। এটি আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এতে সমুদ্র বন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া বার্তায় আরো উল্লেখ করা হয়, সুস্পষ্ট লঘুচাপ বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই-চার ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে মাছ ধরার নৌকা ট্রলারগুলোকে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, গত কয়েক বছরে সৈকতে ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশ জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তবে স্থায়ীভাবে সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমান বৈরী পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ফুটবল খেলা সম্পূর্ণ নিষেধ। শৃঙ্খলা স্বাচ্ছন্দ্যময় সৈকত উপহার দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যেকোনো প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, জেলা প্রশাসন পানি উন্নয়ন বোর্ড আপাতত সৈকতের লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। শুক্রবার পূর্ণিমার জোয়ারে সাগর আরো উত্তাল হতে পারে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা প্রশাসন পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে কাজ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন