এশিয়ার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা হুমকিতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

চাঙ্গি বিমানবন্দরে পঞ্চম যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিঙ্গাপুর ছবি: সংগৃহীত

কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এভিয়েশন শিল্প। ভ্রমণ চাহিদা বাড়ায় লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরছে খাতটি। অবস্থায় কভিডজনিত স্থবিরতার কারণে বিলম্বের পর আবারো সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে এশিয়ার বিমানবন্দরগুলো। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরেছে, সংখ্যা অর্থের দিক থেকে বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের বৃহত্তম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে এশিয়া। যদিও অঞ্চলটি ভ্রমণ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিশ্বের বাকি অংশের চেয়ে পিছিয়ে। বিপরীতমুখী প্রবণতা অঞ্চলটির এভিয়েশন খাতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিক্কেই এশিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিকে সম্প্রসারণ, অন্যদিকে ভ্রমণ পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি আগামী বছরগুলোয় এশিয়ার এভিয়েশন খাতে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করতে পারে। যেখানে উচ্চমূল্যস্ফীতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং মহামারীতে হারিয়ে যাওয়ার পর দক্ষ শ্রম সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটিকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বিমানবন্দর নির্মাণ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর তার প্রধান চাঙ্গি বিমানবন্দরে পঞ্চম যাত্রী টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেছে। কভিডজনিত কারণে বিলম্বের পর হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে।

চলতি বছরের শুরুতে ফিচ সলিউশন কান্ট্রি রিস্ক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চের সমীক্ষা অনুসারে, মূল্যের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। অর্থের হিসাবে যা হাজার ৬০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। দেশটির বৃহত্তম বন্দর শহর বুসানের সমুদ্রতীরে একটি ভাসমান বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। গেদওক আইল্যান্ড এয়ারপোর্ট নামের বিমানবন্দরটি এক দশকের মধ্যে নির্মিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ভিয়েতনামে বেসামরিক টার্মিনালগুলো পরিচালনা করে স্টেট এয়ারপোর্ট করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের মধ্যে ২৩টি বিমানবন্দর আধুনিকায়ন প্রসারিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এতে সব মিলিয়ে বছরে ১৭টি ৩০ লাখ যাত্রী পারাপার হতে পারবে। একই সময়ে ভারতও বিমানবন্দরের সংখ্যা ১৩০ থেকে বাড়িয়ে ২২০টির কাছাকাছি উন্নীত করতে চায়। যখন ফিলিপাইন আসন্ন সাংলে পয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে। ম্যানিলার দক্ষিণে বিমানবন্দরের কাজ সম্পন্ন হলে বছরে ১০ কোটিরও বেশি যাত্রী পরিচালনা করতে সক্ষম হবে দেশটি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশন গত মে মাসে বলেছিল, এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে দুই শতাধিক বিমানবন্দর প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলোয় মোট ২৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ জড়িত। সংখ্যা বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই এগুলো বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে বেশি। কভিডজনিত দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে এসব প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। পূর্ববর্তী বছরগুলোয় রাজস্ব কমে যাওয়া এবং ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের অনিশ্চিত চাহিদার কারণে খাতে বিনিয়োগ হুমকির মুখে। এটি সম্ভবত স্বল্পমেয়াদে বিমানবন্দরের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত সপ্তাহে ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে অঞ্চলের উড়োজাহাজ ভ্রমণ প্রাক-কভিড ২০১৯ সালের পর্যায়ের তুলনায় ৯০ শতাংশ পিছিয়ে। পরিসংখ্যান এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চলে পরিণত করেছে। ইউরোপ আমেরিকার পিছিয়ে থাকার হার যথাক্রমে ৩৬ ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ চীন জাপানে কভিডজনিত সীমান্ত বিধিনিষেধ।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ বলেন, যতদিন চীনা সরকার জিরো কভিড নীতি অব্যাহত রাখবে, ততদিন অঞ্চলের উড়োজাহাজ ভ্রমণ পুনরুদ্ধার আটকে থাকবে। অন্যদিকে জাপান ভ্রমণের অনুমতি দিলেও সেক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এর বাইরে উচ্চমূল্যস্ফীতি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতাও বিমানবন্দরগুলোর চলমান প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে তুলতে পারে। ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট খাতের পরামর্শক সংস্থা টার্নার টাউনসেন্ডের এশীয় অবকাঠামো বিভাগের পরিচালক গ্যাভিন স্টিল বলেন, কভিডে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনার ফলে এশিয়ার এভিয়েশন খাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কর্মী নিয়োগ করা শিল্পের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ ছিল। এছাড়া বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার বাধা এবং এশিয়ার কিছু অংশে স্থানীয় কর্মী ঘাটতি অদূর ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকতে পারে। পরিস্থিতি এশিয়ার অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন