যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার গত চার দশকের সর্বোচ্চ উচ্চতায় রয়ে গিয়েছে। যদিও গত মাসে মূল্যস্ফীতি জুনের তুলনায় ধীর হয়েছে। এর পরও ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়ানো চালিয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি হারের প্রভাব না কমা পর্যন্ত মুদ্রানীতি কঠোর করতে বদ্ধপরিকর মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ জানায়, জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যসূচক জুনের মতো উচ্চহারে বাড়েনি। তবে শ্রমবাজারে এখনো প্রতিকূল পরিস্থিতি বিদ্যমান। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অর্থনীতির গতি ফেরাতে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার আরো বাড়ানো প্রয়োজন হতে পারে।
এ বিষয়ে মিনিয়াপলিস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিল কাশকারি বলেন, বিজয় থেকে এখনো অনেক দূরে রয়েছে ফেড। এ বছরের শেষ নাগাদ ফেডের পলিসি হার বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ সুদহার ৪ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে। বর্তমানে এ হার ২ দশমিক ২৫ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। একই মত সান ফ্রান্সিসকো ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট ম্যারি ড্যালিরও। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে এখনো বিজয় নিশ্চিত করেনি ফেডারেল রিজার্ভ। সেপ্টেম্বরে পলিসি মিটিংয়ে সুদহার তৃতীয়বারের মতো দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
শিকাগোর ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট চার্লস ইভানস বলেন, মূল্যস্ফীতির হারের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। এ বছর পলিসি হার ৩ দশমিক ২৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর এ হার ৩ দশমিক ৭৫ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে মার্চে সুদহার বাড়ানো শুরু করার পর থেকে এ প্রথম ভোক্তা মূল্যসূচক আশাবাদী ছিল।
চলতি বছরের ২০-২১ সেপ্টেম্বর ফেডারেল রিজার্ভের পলিসি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বেঞ্চমার্ক সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। নিল কাশকারি জানান, এক অভিনব পরিস্থিতি চলছে। মূল্যস্ফীতির হার ফেডের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর নীতিনির্ধারকরা। অন্যদিকে রয়েছে আর্থিক মন্দার আশঙ্কাও।
এ বছরের জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যসূচক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। জুনে এ হার ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। যদিও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ হারও রেকর্ড পরিমাণ। জুলাইয়ে খাদ্যপণ্যের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি ছিল। এর অভিঘাত এসে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মার্কিন পরিবারের ওপর।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তা মূল্যসূচক বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের প্রমাণস্বরূপ যথেষ্ট নয়। ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারিম বাস্তা বলেন, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আসার প্রমাণ আরো পেতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। তবে শুরু হিসেবে এটি মন্দ নয়।
এ মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে। এর কয়েক দিন পরই ফেডের পলিসি মিটিং। এরই মধ্যে গত মাসে কোর ভোক্তা মূল্যসূচক জুনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এ সত্ত্বেও অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করতে আবারো এক দফা সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।