চীনের উৎপাদন মূল্যস্ফীতি ধীর, ভোক্তা পর্যায়ে উল্লম্ফন

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের উৎপাদন মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ে ১৭ মাসের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের চাপকে অস্বীকার করেছে। রিয়েল এস্টেট খাতে ধীরগতির কার্যক্রম কাঁচামালের চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন  মূল্যস্ফীতির গতি শ্লথ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও মাংসের সরবরাহ সমস্যার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি দুই বছরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। খবর রয়টার্স।

গতকাল ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) জানিয়েছে, জুলাইয়ে উৎপাদক মূল্য সূচক (পিপিআই) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেড়েছে। যেখানে জুনেও বাড়ার হার দশমিক শতাংশ ছিল। গত মাসের পিপিআই বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস দশমিক শতাংশের চেয়েও ধীর হয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে উৎপাদক মূল্যবৃদ্ধি গত বছরের অক্টোবরে ২৬ বছরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছার পর মন্থর হয়েছে। উৎপাদন  মূল্যস্ফীতিতে এমন শ্লথগতি দেশটির নীতিনির্ধারকদের কিছুটা অবকাশ করে দিয়েছে। যখন রেকর্ড সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে।

যদিও চীনে পরিস্থিতির জন্য বিশ্লেষকরা মূলত দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে দায়ী করেছেন। জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ার মতো বিশ্বজুড়ে মূল্যের চাপ কিছুটা ধীর হওয়ার বিষয়টিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং একটি গবেষণা নোটে বলেন, পণ্যের দামে পতন, সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা সহজ হওয়ায় উৎপাদন  মূল্যস্ফীতি বছরের বাকি সময়েও ধীর হবে।

ধীরগতির একটি চিহ্ন হিসেবে জুলাইয়ে পিপিআই আগের মাসের তুলনায় দশমিক শতাংশ কমেছে। নিয়ে চলতি বছরে প্রথমবারের মতো মাসভিত্তিক পিপিআইয়ে পতন হয়েছে। সময়ে ধাতু পেট্রোকেমিক্যালের দামে সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে।

জুলাইয়ে কারখানাগুলোর কাঁচামালের মূল্যও কমে গিয়েছে। গত সপ্তাহে চীনের সরকারি পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) অনুসারে, জ্বালানি কাঁচামালের ব্যয় কমে যাওয়ার বিষয়টি উৎপাদন দামে পতনের ইঙ্গিত দিয়েছিল। সব মিলিয়ে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সংকোচন থেকে রক্ষা পেলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি যথেষ্ট ধীর হয়েছে। কভিডজনিত বিধিনিষেধ, ঋণে জর্জরিত রিয়েল এস্টেট বাজার ভোক্তা মনোভাবে পতন অর্থনীতিকে ধীর করে দিয়েছে।

এদিকে জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) এক বছর আগের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেড়েছে। হার ২০২০ সালের জুলাইয়ের পর দ্রুততম বৃদ্ধি। যদিও হার দশমিক শতাংশের পূর্বাভাসের চেয়ে পিছিয়ে। ভোক্তা মূল্যে প্রধান চালক ছিল খাদ্য মূল্যস্ফীতি। খুচরা পর্যায়ে খাদ্যপণ্যের দাম এক বছর আগের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেড়েছে। হার জুনের দশমিক শতাংশের চেয়ে দ্রুততর হয়েছে। এছাড়া খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে লাল মাংস। পণ্যের দাম বার্ষিক ২০ দশমিক শতাংশ হারে বেড়েছে। যদিও জুনে মাংসের দাম শতাংশ কমে গিয়েছিল। প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম মন্থর হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে মন্থর প্রবৃদ্ধির মধ্যে পিপলস ব্যাংক অব চায়না আর্থিক নীতি সহজ রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার বাড়ানোয় মূলধনের বহিঃপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগের কারণে নীতি সহজ করার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভবত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বেগবান করতে খাত অনুযায়ী নীতি সহজীকরণের দিকে হাঁটবে।

এইচএসবিসির অর্থনীতিবিদ এরিন জিন একটি নোটে বলেন, সব মিলিয়ে সিপিআই মূল্যস্ফীতি চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা শতাংশের নিচে রয়ে গিয়েছে। এজন্য নীতিনির্ধারকরা সুবিধাজনক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখবে বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া কভিডজনিত অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট বাজারে দুর্বল অনুভূতি দেশটির অর্থনীতির জন্য নীতি সহজ রাখা প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন