জেটের যন্ত্রাংশ পুনর্ব্যবহার করছে রুশ এয়ারলাইনস

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের জের ধরে রাশিয়ার ওপর ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশ থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কিনতে পারছে না রুশ উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলো। তাই বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা অ্যারোফ্লোটসহ দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইনসগুলো কিছু উড়োজাহাজ থেকে যন্ত্রাংশ খুলে বহর চলমান রাখার চেষ্টা করছে।

চলতি বছরের জুনে রুশ সরকারের পরামর্শ মেনেই পদক্ষেপ নিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো। বহরে থাকা বিদেশী উড়োজাহাজগুলো দিয়ে যেন ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাজ চলে, সে লক্ষ্যেই যন্ত্রাংশগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালায় রুশ সেনাবাহিনী। এতে করে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমা জোট। ফলে যন্ত্রাংশ কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পশ্চিমমুখী হওয়ার উপায় নেই রুশ এয়ারলাইনসগুলোর।

উড়োজাহাজ বিশেষজ্ঞরা বলেন, রুশ এয়ারলাইনসগুলো বহরের বিদেশী উড়োজাহাজগুলো রক্ষণাবেক্ষণের তাগিদে দেশীয় উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে অ্যারোফ্লোটের বহরে থাকা রাশিয়ার তৈরি সুখোই সুপারজেট ১০০ এয়ারবাস এ৩৫০ উড়োজাহাজ থেকে যন্ত্রাংশ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরঞ্জাম নেয়া হচ্ছে অ্যারোফ্লোটের বহরের বোয়িং ৭৩৭ এয়ারবাসের ৩২০ উড়োজাহাজগুলো থেকেও। বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অসম্মতি জানিয়েছে রাশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় অ্যারোফ্লোট।

বিদেশী যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরশীল রাশিয়ার সুখোই সুপারজেট। এরই মধ্যে একটি সুপারজেট চালুর জন্য অন্য একটি সুপারজেটের ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উড়োজাহাজের ইঞ্জিন যন্ত্রাংশগুলো নিয়ম মেনে বদল করা হবে।

এ৩২০ নিও, এ৩৫০, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বোয়িং ৭৮৭-এর মতো নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজগুলোর প্রযুক্তি ক্রমাগত হালনাগাদ করতে হয়। বিষয়ে পশ্চিমা উড়োজাহাজ শিল্প খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, এক বছরের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া মাত্র আধুনিক উড়োজাহাজগুলোর পরিষেবা চালু রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে রাশিয়ার জন্য।

একটি উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য অন্য একটি উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ ব্যবহার নতুন নয়। সচরাচর তা করা না হলেও কখনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিকূলতার কারণেও পদ্ধতি প্রয়োগ করে এয়ারলাইনসগুলো।

অ্যারোফ্লোটের বহরের প্রায় ৮০ শতাংশ উড়োজাহাজ বোয়িং এয়ারবাসের। গত বছরের তথ্য অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির বহরে রয়েছে ১৩৪টি বোয়িং ১৪৬টি এয়ারবাসের উড়োজাহাজ। এছাড়া প্রায় ৮০টি সুখোই সুপারজেট১০০ উড়োজাহাজও অ্যারোফ্লোটের বহরে রয়েছে। ফ্লাইটর্যাডার২৪-এর তথ্য বলছে, অ্যারোফ্লোটের সাতটি এয়ারবাস এ৩৫০-এর মধ্যে তিনটিই গত তিন মাসে কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করেনি।

এদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গন্তব্যের সংখ্যাও সীমিত হয়েছে রুশ উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থার। সে হিসেবে অব্যবহূত উড়োজাহাজের সংখ্যাও বেশি প্রতিষ্ঠানটির। সেগুলো এখন যন্ত্রাংশ বদলের জন্য কাজে আসবে।

বিষয়ে এভিয়াপোর্ট থিংকট্যাঙ্কের প্রধান কর্মকর্তা অলেগ পান্তেলিভ বলেন, পশ্চিমা উৎপাদকরা বোঝেন যে, প্রায় সব সুপারজেটই রাশিয়ায় পরিচালনা করা হচ্ছে। উৎপাদন খুচরা যন্ত্রাংশ পরিবহন বন্ধ করলেই তা ব্যাহত হবে।

২০৩০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার উড়োজাহাজ শিল্প খাতের বিস্তৃত পরিকল্পনা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এ৩৫০ বোম্বারডিয়ার কিউ সিরিজের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে দেশটিতে। প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে ইঞ্জিন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো চালু রাখা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন