বিশ্ববাজারে দাম কমছে

দেশে সয়াবিনের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বে ভোজ্যতেল উৎপাদন বেড়েছে। সেই সঙ্গে রফতানিকারক দেশগুলোয় বেড়েছে তেলের মজুদ। ফলে বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে কমছে সয়াবিন তেলের দাম। তবে অব্যাহত দরপতনের মধ্যেও দেশের বাজারে সয়াবিনের লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) প্রস্তাব দেয়া হয়। নতুন প্রস্তাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।

এর আগে সর্বশেষ গত ২১ জুলাই তেলের দাম কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে মিল মালিকদের সংগঠনটি। সে সময় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ এবং লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি পাম তেলের দামও টাকা কমানো হয়। পাম তেলের নতুন দাম ১৫২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ ১৫ দিনেরও কম সময়ের ব্যবধানে নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মো. মাহমুদুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি মাসেই নিয়ম করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এখন তাদের প্রস্তাবটি আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনার পর সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারপর দাম বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ব্যয়ের একটি বিবরণও তুলে ধরেছে। সেখানে বলা হয়, বছর বোতলজাত সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ প্রতি লিটার ২০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, যা সম্প্রতি দুই দফায় ২০ টাকা কমায় তেল কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২১ জুলাই লিটারপ্রতি দর ১৪ টাকা কমানো হয়। কিন্তু এখন টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের আমদানিমূল্য বেড়েছে। কারণে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

ভোজ্যতেল পরিশোধন বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, আমদানির ব্যয় বেড়েছে বলে আমরা নতুন প্রস্তাব দিয়েছি। এখন বাকিটা সরকার বিবেচনা করবে। আমরা কত দামে আমদানি করেছি, ডলারের দাম কত পড়েছে, বিশ্ববাজারে দর কত এসব বিবেচনার পর সরকার যদি মনে করে দাম বাড়ানো উচিত, তাহলে বাড়াবে। আর যদি কমানোর সুযোগ থাকে, কমাবে। পুরোটাই এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

ব্যবসায়ী আরো বলেন, দাম পর্যালোচনা নিয়ে প্রতি ১৫ দিন পরপর সভা হওয়া উচিত। আমরা চাই সভাটি নিয়মিত হোক।

নিয়ম অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো ট্যারিফ কমিশনকে প্রস্তাব দেয়। এরপর কমিশন তা পর্যালোচনা করে। তারপর সে অনুযায়ী নির্ধারিত হয় তেলের মূল্য। মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির পর পরিশোধন করে দেশের বাজারে ছাড়ে। কেউ কেউ সয়াবিন বীজ আমদানি করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে যখন ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয়, তখন ডলারের দাম বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল। সে কারণে তখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম যতটা কমেছিল, দেশে সে অনুযায়ী কমেনি। এখন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা যেতে পারে। তবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ চাপে রয়েছে, বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এছাড়া গত শুক্রবার রাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় সামনের দিনগুলোয় চাপ আরো বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে গত ২৮ জুলাই সয়াবিন তেলের দর উঠেছিল টনপ্রতি হাজার ৪৫১ ডলার। গত বুধবার দর নেমে আসে টনপ্রতি হাজার ৪৩৪ ডলারে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিনের টনপ্রতি দর কমেছে ১৭ ডলার। সয়াবিনের চেয়ে বেশি কমেছে পাম অয়েলের দাম। গত ২৮ জুলাই পাম অয়েলের দর উঠেছিল ৮৮৮ ডলারে। তবে বুধবার দর ৮৬৬ ডলারে নেমে এসেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের সর্বোচ্চ দাম ওঠে হাজার ৭৭৭ ডলার। সয়াবিনের দাম মার্চে ওঠে হাজার ৯৫৭ ডলার, এপ্রিলে হাজার ৯৪৮ মে মাসে হাজার ৯৬৩ ডলারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ২০৫ টাকায় নির্ধারণ করে মিল মালিকদের অ্যাসোসিয়েশন সরকার। তবে দুই মাস ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম টানা কমতে থাকলে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে পাম অয়েলের লিটারপ্রতি দাম টাকা কমিয়ে করা হয় ১৫৬ টাকা।

দেশের ব্যবসায়ীরা মূলত মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া থেকে হালকা পরিশোধিত আকারে বিডি পাম অয়েল আমদানি করে। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল থেকে। বছরে ২১ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়। এছাড়া মাড়াই করে পাওয়া যায় আরো তিন লাখ টন সয়াবিন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন