চীনা অর্থায়নের প্রকল্পগুলো ত্বরান্বিত করতে সম্মত দুই দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে মোট ২৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল হাজার কোটি ডলারের। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র আটটি প্রকল্প অগ্রসর হয়েছে। অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৮ লাখ ডলার। দীর্ঘ ছয় বছর পর এসব প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে চীন বাংলাদেশ। গতকাল চীন বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

গত শুক্রবার বিকালে দুদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। গতকাল সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকে যোগ দেন তিনি। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা। পরে বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

. আব্দুল মোমেন বলেন, বৈঠকে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, এর মধ্যে দুটো নবায়ন করা হয়েছে এবং দুটো নতুন সই হয়েছে। ওয়াং ইর সফর রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। বৈঠকে এক চীন নীতি বিষয়ে বাংলাদেশের বিশ্বাসের কথা তাকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ?রে?ছেন।

রূপকল্প ২০৪১ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে দেশের উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজন।

দ্বিপক্ষীয় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য কিনি। সে তুলনায় আমরা যা রফতানি করি তার পরিমাণ অত্যন্ত কম। আমরা প্রায় হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করি, বিপরীতে মাত্র ৬০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করি। বিরাট ব্যবধান কমানোর বিষয়ে জোর দিয়েছি আমরা। এজন্য আমরা বেশকিছু সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে একটি হলো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য যেমন পোশাক, সবজি, ওষুধকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে। আমাদের প্রায় ৯৮ শতাংশ পণ্য চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পায়। সেটির পরিধি আরো বাড়িয়ে এসব নতুন পণ্য যুক্ত করার সুপারিশ করেছি। বিষয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মতও হয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসবের পাশাপাশি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চীনকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। মহামারীর কারণে শুরু থেকে চীনে পড়তে যাওয়া যেসব বাংলাদেশী শিক্ষার্থী দেশে এসে আটকা পড়েছে, তাদের দ্রুত চীনে ফিরে গিয়ে লেখাপড়া শেষ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলেছি। তিনি সম্মত হয়েছেন, আগামীকাল থেকেই বিষয়ে কাজ শুরু হবে। এছাড়া চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালুর কথাও বলেছি। নীতিগতভাবে তিনি এটায় রাজি হয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ২০১৬ সালের বাংলাদেশ সফরে প্রায় ২৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে মাত্র আটটি অগ্রসর হয়েছে। ২৭ প্রকল্পে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে আটটি প্রকল্পে ছাড় হয়েছে ৩৮ লাখ ডলার, যা আসলে পরিমাণে খুবই সামান্য। প্রকল্পগুলোর কাজ ত্বরান্বিত করার বিষয়ে চীনও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরো জোরদার হবে বলে মনে করেন . আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও চীনের কাছে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। চীন এক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

দুই মন্ত্রীর বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের ?লেন, প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে ঘণ্টা দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে চারটি চুক্তি সমঝোতা সই হয়। সমঝোতা স্মারকগুলো হলো পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ, দুর্যোগ মোকাবেলা সহায়তায় পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। উল্লেখ্য, শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকায় পৌঁছান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ১৭ ঘণ্টার সফর শেষে গতকাল দুপুরে ঢাকা ছাড়েন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন