‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে ফারুকী

আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ সিনেমাটা দেখবে

সাবিহা জামান শশী

খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। একাধিক সিনেমা নির্মাণ করেছেন তিনি, যার বেশির ভাগই বয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক সম্মান। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিতশনিবার বিকেলসিনেমাটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সালেশনিবার বিকেল’-এর শুটিং শুরু হয়। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, তিশা, ইরেশ যাকের, মামুনুর রশীদ প্রমুখ। ফিলিস্তিনের অভিনেতা ইয়াদ হুরানি কলকাতার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন এতে। শনিবার বিকেল নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। কিন্তু তাতে বাদ সাধে সেন্সর বোর্ড। ২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ড প্রথমে ছবিটি প্রদর্শনের অনুমতি দিলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। জানানো হয়, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত সিনেমাটি বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনপদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে।

নিয়ে গতকাল নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘আজকে সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেল! রকম কত সকাল যে আমার গেছে। আমি একটা ছবি বানাইছি শনিবার বিকেল নামে। যেটা সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়ে বললেন, আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি। তারপর এক অদৃশ্য ইশারায় ছবিটার দ্বিতীয় শো করে তারা। এবং তারপর বলে দিল, ছবি ব্যান। আমরা আপিল করলাম। আজকে সাড়ে তিন বছর হলো আপিলের। কোনো উত্তর নাই। এবং আমাদেরও বুঝি কিছু বলার নাই। কারণ তারাপদ রায়ের কবিতার মতো আমাদের কখন সর্বনাশ হয়ে গেছে আমরা টেরও পাইনি। আজকে শনিবার বিকেলের ওপর ইস্টার্নকিকের রিভিউটা হঠাৎ সাজেস্ট করল আমাকে অ্যালগরিদম। এটা আমি আগে পড়ি নাই। পড়ে মনে হইল আমরা ফুল, পাখি, লতা, পাতা নিয়া ছবি বানাইলেঠিক আছে”! এমন কিছু বানানো যাবে না যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়। কিন্তু আমি তো চিরকাল সেইসব গল্পই বলে আসছি যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়, সেটা প্রেমের গল্পই হোক আর রাজনীতির গল্পই হোক। আমি তো অন্য কিছু পারি না। তাহলে পাখি সব যে রব করবে, সেটা কি নতুন সুরে করতে হবে? নতুন সুর শিখতে হবে? (রিভিউটা কেউ পড়তে চাইলে আমার আগের পোস্ট চেক করতে পারেন।)’

সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে কেন আটকে দেয়া হলো নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ফারুকী বলেন, ‘এটার কারণ আমি নিজেও জানি না। তারা সেই সময়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কথা বলেনি আমাকে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, অস্থিরতা তৈরি হতে পারে ধরনের কথা বলা হয়েছিল তখন।শনিবার বিকেলকীভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। হলিউড রিপোর্টার পত্রিকাশনিবার বিকেলনিয়ে রিভিউ দিয়েছে। যাতে তারা লিখেছে সিনেমাটা কীভাবে দেশের ইমেজ নষ্ট করবে এটা আমরা জানি না। বরং সিনেমা দেশের ইমেজ আরো বাড়াতে পারে।

নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘হলিউড রিপোর্টার মনে করছে শনিবার বিকেল বাংলাদেশের ইমেজের জন্য ভালো। অন্যদিকে আমাদের দেশের সেন্সর বোর্ড বলছে এটা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। আসলে এটা আমাদের দর্শকরা দেখলেই বুঝতে পারবে। সেন্সর বোর্ডের কাছে আমরা আপিল করেছি। আপিলের কোনো উত্তর আমরা এখনো পাইনি। দেশের ভাবমূর্তি বাড়ে বা কমে রিয়েল ওয়ার্ল্ডে কী হচ্ছে তার ওপর। রিয়েল ওয়ার্ল্ড বলতে আমাদের বাস্তব জীবনে দেশে কী কী ঘটে, সমাজে কী হয় সেটার ওপর নির্ভর করে দেশের ইমেজ। ফিল্ম ওয়ার্ল্ডে কী হচ্ছে এটা দিয়ে ইমেজ বাড়া বা কমার কিছু নেই। সবকিছু যদি ঠিকঠাক চলে তাহলে আপনার ইমেজ কেউ ক্ষুণ্ন করতে পারবে না। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ সিনেমাটা দেখবে। মানুষের জন্য আমি শনিবার বিকেল নির্মাণ করেছি।

বর্তমান সময়ে কাজের ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আমি বেশকিছু স্ক্রিপ্ট লিখছি। প্রেমের গল্প নিয়ে আমি কাজ করছি, এখন দেখা যাক।

দেশের সেন্সর বোর্ডের চৌকাঠ না পেরোলেও শনিবার বিকেল আন্তর্জাতিক মহলে একাধিক পুরস্কার জিতে নিয়েছে। মস্কোয় দুটি ইনডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কার পেয়েছে সিনেমাটি। এর একটি রাশান ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস জুরি পুরস্কার আর অন্যটি হলো কমেরসান্ত পুরস্কার। সম্প্রতি বিশ্বজনপ্রিয় গণমাধ্যম হলিউড রিপোর্টারও সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করেছে, যাতে উঠে এসেছে সিনেমাটি সম্পর্কিত নানান খুঁটিনাটি বিষয়ের পাশাপাশি ইতিবাচক মন্তব্য। দেশের অনেক সিনেমাপ্রেমীর প্রত্যাশা, প্রেক্ষাগৃহে না হলেও অন্তত ওটিটি প্লাটফর্মে শনিবার বিকেল মুক্তি দেয়া হোক, যাতে তারা সিনেমাটি উপভোগ করতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন