বৈরী আবহাওয়ায় ঝুঁকিতে চালের বৈশ্বিক সরবরাহ

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈরী আবহাওয়ার কারণে চালের বৈশ্বিক উৎপাদন মজুদ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উৎপাদন কমে গেলে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্যটির সরবরাহ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভারত। অন্য শীর্ষ দেশগুলোর অবস্থানও এশিয়ায়। অঞ্চলে লম্বা সময় ধরেই প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চাল উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতার মুখে কৃষক মিল মালিকরা। পৃথিবীজুড়ে এমনিতেই খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করছে। তার ওপর চালের বাজারে সংকট নেমে এলে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে অন্যান্য পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়লেও উল্টো পথে হেঁটেছে চালের বাজার। উচ্চফলন উৎপাদন এবং বিপুল পরিমাণ মজুদের কারণে কৃষিপণ্যটির দাম ছিল স্থিতিশীল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে সব খাতেই সরবরাহ বাধার মুখে পড়ে। চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত সরবরাহ চেইনকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। লাফিয়ে বেড়েছে গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য তেলবীজের দাম। কিন্তু প্রতিকূলতার মধ্যেও চালের সরবরাহ দাম ছিল স্বস্তিদায়ক।

ব্যবসায়ী বিশ্লেষকরা জানান, বৈশ্বিক চাল উৎপাদনের ৯০ শতাংশই আসে এশিয়া থেকে। রফতানির সিংহভাগ অংশীদারত্বও অঞ্চলের। কিন্তু এশিয়ার রফতানিকারক দেশগুলোয় প্রচণ্ড গরম, খরা শুষ্ক আবহাওয়া চালের উৎপাদনের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে শস্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী চাপের মুখে পড়তে পারে।

ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের কৃষি বাণিজ্যবিষয়ক অর্থনীতিবিদ ফিন জিবেল বলেন, উন্নয়নশীল এবং স্বল্প উন্নত দেশগুলোর জন্য বর্তমানে খাদ্যপণ্যের প্রাপ্যতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে এসব দেশ। পরিস্থিতিতে চালের দাম বাড়লে দেশগুলো আরো বিপাকে পড়বে।

কখনো অতিবৃষ্টি আবার কখনো অনাবৃষ্টির মুখে ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন বেল্ট। একটি বড় ধরনের দাবদাহ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে চীনের চাল উৎপাদন। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা, প্লাবন কিংবা ঢল তৃতীয় শীর্ষ দেশটির কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। অন্যতম শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনামে চালের গুণগতমান কমেছে। এসব কারণে শীর্ষ চার দেশের চাল উৎপাদন নিশ্চিতভাবে কমবে বলে জানিয়েছেন কৃষক, উৎপাদক ব্যবসায়ীরা।

জাতিসংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতিবিদ শার্লি মুস্তাফা বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু ওই সময়ও চালের দাম ছিল সাধ্যের মধ্যে। তবে বর্তমানে বেশকিছু চাল উৎপাদক দেশে আবহাওয়াজনিত কারণে আমদানি বাজারে অস্থিতিশীলতার আভাস পাচ্ছি। ভারত, চীন বাংলাদেশসহ এসব দেশে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যেতে পারে।

অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি ভি কৃষ্ণ রাও বলেন, ভারতের প্রধান চাল উৎপাদনশীল রাজ্যগুলোয় বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে চলতি বছর দেশটিতে ধানের আবাদ ১৩ শতাংশ কমার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। উৎপাদন এক কোটি টন বা গত বছরের তুলনায় শতাংশ কমতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন