টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা

দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্রকৌশল প্রযুক্তির বিষয়গুলো। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর পছন্দের বিষয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। চাহিদা থাকায় পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি টেক্সটাইলের ডিগ্রি দিতে গড়ে উঠেছে নানা ইনস্টিটিউটও। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের টেক্সটাইলে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে ধারণা দিতে আমাদের আজকের আয়োজন। লিখেছেন শফিকুল ইসলাম

আধুনিক যুগে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি জনপ্রিয় প্রকৌশল ক্ষেত্র। এটি বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পও। কারণ পোশাক আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্প দ্রুতই বিকাশ লাভ করেছে এবং বর্তমানে বিশ্বমানের টেক্সটাইল শিল্পে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। পোশাক রফতানিতে চীনের পর বাংলাদেশের অবস্থানও দ্বিতীয়। এখন বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার গার্মেন্টস এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি বস্ত্র শিল্প রয়েছে। প্রায় ৪৫ লাখ লোক শুধু পোশাক শিল্পে কাজ করে। এছাড়া প্রায় ৮৫ হাজার বিদেশী বাংলাদেশে বৈধভাবে কাজ করে। সুতরাং একটি বিশাল কাজের সুযোগ রয়েছে খাতে। 

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ফলিত বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটি শাখা যা টেক্সটাইলের নকশা, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবহার নিয়ে কাজ করে। ফাইবার থেকে ইয়ার্ন, ইয়ার্ন থেকে ফ্যাব্রিক, তার ওপর ডাইং, প্রিন্টিং এসব ক্ষেত্রে দক্ষতা পারদর্শিতা অর্জনই হলো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। তাছাড়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা বস্ত্র শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন এবং যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করে।

কেন পড়বেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বলতে এখন শুধু সেলাই করে গার্মেন্টস তৈরিকেই বোঝায় না, গার্মেন্টস তৈরির সঙ্গে সঙ্গে এর রূপ, রঙ, আরামদায়ক প্রবণতা থেকে আগুন প্রতিরোধী কিনা, আগ্নেয়াস্ত্রের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারবে কিনা, পানিরোধী কিংবা সুগন্ধ প্রবণতাকেও বোঝায়। মহাকাশচারী যে পোশাক পরবে কিংবা অস্ত্রোপচারের পর যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হবে অথবা যে পোশাক পরিধানে শরীরের রক্তচাপ থেকে মানসিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ পোশাকে দৃশ্যমান হবে এমন বিষয়গুলোও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেকচারার মনীন্দ্র নাথ রায় বলেন, বস্ত্র খাতে প্রতি বছর মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়। এতে জড়িয়ে আছে দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী। তাতে শুধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটরাই নয়, ভিড় করে নন-টেক্সটাইল গ্র্যাজুয়েটরাও, যা খাতের সমৃদ্ধিকেই প্রমাণ করে। খাত জীবন জীবিকার রোমাঞ্চকর অনুভূতি আছে। রয়েছে আর ১০টা গ্র্যাজুয়েটের মতো রাজকীয় চাকরির সুযোগ। তাই টেক্সটাইলের অগ্রযাত্রায় মানবকল্যাণ অথবা অর্থনীতির চাকায় দেশ-দশ তথা নিজের কল্যাণ চাইলে শ্রম মেধার সময়োচিত সমন্বয়ে পড়তে হবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা

টিউশন ফি ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনার জন্য বিদেশে টেক্সটাইলে বিএসসি, এমএসসি এবং পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য আইইএলটিএস স্কোর সর্বনিম্ন . বা তার বেশি প্রয়োজন হবে। এছাড়া জিআরই, টোফেল কোর্সে ভালো স্কোর থাকলে ফুল ফ্রি স্কলারশিপ সহজেই মিলবে। রয়েছে চাকরির সুযোগ। ইউরোপের দেশগুলো যদি আপনার পছন্দের তালিকায় প্রথম থাকে তাহলে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, জার্মানি তিন দেশ সেরা, কারণ এখানে টিউশন ফি লাগে না। এছাড়া নেদারল্যান্ডস ডেনমার্কে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। জার্মানির Hochschule Niederrhein University of applied science-এর ম্যানেজমেন্ট অব টেক্সটাইল ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে এমএসসি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী শরিয়ত উল্লাহ বলেন, ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এমন সেরা সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, নেব্রাস্কা লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেনের বোরাস বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব হফ এবং যুক্তরাজ্যের বোল্টন বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক . মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দীন বলেন, বিদেশে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে টেক্সটাইল বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা, ফিলাডেলফিয়া, জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিডস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড ব্রিস্টল, ইউনিভার্সিটি অব বোল্টন, কানাডার ম্যানিটবা, আলবার্টা ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি, কোরিয়ার ইনহা ইউনিভার্সিটি, চায়নার উহান ডংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হংকংয়ের হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি উচ্চশিক্ষার জন্য শীর্ষে রয়েছে।

চাকরির বাজার

আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্মক্ষেত্র দিন দিন প্রসার হচ্ছে এবং বিদেশেও আকর্ষণীয় বেতনে বাংলাদেশী গ্র্যাজুয়েটরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক . মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দীন বলেন, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে দেশে ১০ হাজারের অধিক গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে খাতে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্রও বিস্তর। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, কেমিক্যাল, ফ্যাব্রিক, ইয়ার্ন মার্কেটিং, মেশিন মাকেটিং, দেশী-বিদেশী কনসালট্যান্সি, ডাটা অ্যানালাইসিস, কলেজ, আইএফসির মতো বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট সংস্থা, আরএমজি, ফ্যাশন ডিজাইনিং, জুট এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট, সরকারি প্রতিষ্ঠান, ডেনিম, গার্মেন্ট ওয়াশিং, গার্মেন্টস কোম্পানি, দেশী-বিদেশী বায়িং হাউজ, শিল্প ঋণ প্রদানকারী সংস্থা, ট্রেডিং হাউজ, বিভিন্ন স্পিনিং, নিটিং, উইভিং এবং ডাইং মিল, প্রিন্টিং, এছাড়া ব্যাংকের প্রজেক্ট ফাইন্যান্সেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের আয় কেমন জানতে চাইলে মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দীন বলেন, একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ১৫-২৫ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করলেও তিন-চার বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে বেতন ৫০-৬০ হাজার টাকা হতে পারে। দক্ষতা এবং প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারলে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা বেতন পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে অনেকেই খাতে ৩০ লাখ টাকা বেতনে চাকরি করছেন। তবে নিজেকে অবশ্যই দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন