ইউক্রেন ছেড়েছে আরো চার জাহাজ

খাদ্য সংকটের সমাধান না হলেও আশার সঞ্চার

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউক্রেনের খাদ্যশস্য বহনকারী জাহাজ রাজোনি ছবি: এপি

খাদ্যসামগ্রী বোঝাই চারটি জাহাজ ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ওডেসা বন্দর ছেড়েছে। জাহাজগুলোয় রয়েছে প্রায় লাখ ৭০ হাজার টন ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য। ইউক্রেনিয়ান সি পোর্ট অথরিটি তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এপির খবর অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে লেবাননের মতো দেশে যে খাদ্য সরবরাহে সংকট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, এসব জাহাজ ইউক্রেন বন্দর ছেড়ে আসায় সে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কারণ খাদ্য সরবরাহের জন্য কেবল কৃষ্ণসাগরেরই ওপর নির্ভর করে লেবানন। সেখানে পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১২২ শতাংশ।

যুদ্ধের কারণে দুই কোটি টন খাদ্যশস্য ইউক্রেনের অভ্যন্তরে আটকা পড়েছিল। গত সোমবার দ্য রাজোনি নামের জাহাজের ইউক্রেন বন্দর ছাড়ার মধ্য দিয়ে খাদ্য সরবরাহ সংকট থেকে উত্তরণের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেল বিশ্ব। এসব শস্য বিভিন্ন খামার বেকারিতে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এশিয়ার কিছু অংশের দরিদ্র মানুষের খাদ্যে পরিণত হবে। তবে এখনই সব সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে না।

তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান গ্রো ইনটেলিজেন্সের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জনাথন হাইনেস বলেন, জাহাজ চলাচল শুরু হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে দুই কোটি টন খাদ্যশস্য ইউক্রেনে আটকা পড়েছে তার তুলনায় একটি জাহাজে বহন করা ২৬ হাজার টন হয়তো কিছুই না। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যেও যে জাহাজীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অল্প পরিমাণ শস্য ইউক্রেন থেকে বিশ্বের উদ্দেশে বের হলে খাদ্যের দাম কমতে শুরু করবে বা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট দূর হয়ে যাবে, সেটা ভাবলে ভুল হবে। আরেকটি বিষয় হলো যেসব খাদ্য আটকা পড়েছে তার বেশির ভাগই পশুখাদ্য, মানুষের খাদ্য নয়। এতে হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোমালিয়া বা আফগানিস্তানের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশের মানুষের ওপর যুদ্ধের প্রভাব আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে। এসব দেশে খাদ্যসংকট চরম আকার ধারণ করতে যাচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য জ্বালানি বহু মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এর পরও ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য সরবরাহ শুরু হওয়াকে বিশ্বের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর গত শনিবারই প্রথম বিদেশী পতাকাবাহী কোনো জাহাজ ইউক্রেনের বন্দরে ভিড়েছে, যেটি ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য পরিবহন করতে এসেছে। দেশটির অবকাঠামো-বিষয়ক মন্ত্রী ওলেজান্দার কুবরাকভ বলেন, আমরা ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বাড়াচ্ছি। ভবিষ্যতে যেন বন্দরগুলো মাসে অন্তত ১০০ জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজে সমর্থ হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। এজন্য নতুন নতুন বন্দরকে যুক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর আগে, ইউক্রেন রাশিয়া মিলে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ গম রফতানি করত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ইস্তানবুলে অবস্থিত একটি জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (জেসিসি) মাধ্যমে শস্য রফতানির কাজ শুরু হয়েছে; যেখানে রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে কাজ করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন