প্রবাল বাড়লেও ঝুঁকিতে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ

বণিক বার্তা ডেস্ক

পৃথিবীর প্রাকৃতিক রত্নের সম্ভার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব পাশে হাজার ৩০০ কিলোমিটারজুড়ে এর বিস্তৃতি। ৩৬ বছরের মধ্যে সপ্তাহে পুরো প্রবাল প্রাচীরে থাকা প্রবালের সংখ্যা উত্তর কেন্দ্রীয় অংশে সর্বাধিক হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকাভুক্ত জায়গাটিতে সংকট শেষ হয়ে গিয়েছে। জলবায়ু সংকটে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র্য ধারণ করা তিন হাজার স্বতন্ত্র রিফ বা প্রবালপ্রাচীর।

দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুসারে, বর্তমানে বাস্তুসংস্থানে বহু ধরনের হুমকি ব্যাঘাত আসছে। রিফের জন্য তার একটি হলো প্রবালখেকো লোভী স্টারফিশ। ভূমি থেকে আসা দূষণ ধ্বংসাত্মক সাইক্লোন রিফকে আরো ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এখানে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে জলবায়ুর উষ্ণায়ন। এতে অনেক প্রবাল ধুয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স (এআইএমএস) মনিটরিং প্রোগ্রামে ৮৭টি প্রবাল প্রাচীর নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে। সংস্থাটির রিপোর্টে কঠোর প্রবালগুলোকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ সেগুলোর কঙ্কাল দিয়েই প্রবালপ্রাচীরের গঠন তৈরি হয়।

সম্প্রতি কয়েক বছরে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে সদাশয় হয়েছে। কম সাইক্লোন, স্টারফিশের সংখ্যা কমে আসা এবং লা নিনা আবহাওয়া ধরনের কারণে পরিস্থিতি কিছুটা ঠাণ্ডা হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই প্রথম বড় আকারের প্রবাল ধুয়ে যাওয়া বা ব্লিচিংয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে খুব হতবাক হয়ে যান সামুদ্রিক বিজ্ঞানীরা। কারণ তাদের ধারণা ছিল বছরটা ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে প্রবালগুলো পুনরুদ্ধারের সুযোগ পাবে। পরিবেশ উষ্ণায়নের জন্য লা নিনা বছরও এখন প্রবালের জন্য নিরাপদ নয়।

এর আগে বড় আকারে প্রবাল ধুয়ে যাওয়া বা ব্লিচিংয়ের ঘটনা ঘটে ১৯৯৮ সালে, একই ঘটনা পরে ২০০২, ২০১৬, ২০১৭, ২০২০ ২০২২ সালেও ঘটে। একটি গবেষণার তথ্য বলছে, ১৯৯৮ সালের ব্লিচিংয়ের ঘটনায় মাত্র শতাংশ প্রবাল বাঁচতে পেরেছিল।

এআইএমএস মনিটরিং রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন ব্লিচিং অনেক বিস্তৃত ছিল, সে সময়ে তাপমাত্রা এত বেশি ছিল না যে প্রবালগুলোকে মেরে ফেলতে পারে। উষ্ণতার তীব্রতার ওপর নির্ভর করে প্রবাল মারা যাবে, নাকি বেঁচে থাকবে। যদি প্রবালগুলো দীর্ঘ সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় বেশি গরম পানিতে থাকে, তাহলে তাদের গায়ে থাকা শৈবাল মারা যায়। এসব শৈবালই তাদের রঙ দেয় এবং খাবার সরবরাহ করে।

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্ক অথরিটির প্রধান বিজ্ঞানী . ডেভিড ওয়াচেনফিল্ড বলেন, এখন ভালো খবর পেয়েছি তা ঠিক। কিন্তু ২০২২ সালে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দশমিক সেলসিয়াস হওয়ায় প্রবালপ্রাচীর তার স্থিতিস্থাপকতা হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে প্রবালপ্রাচীরকে সুস্থ অবস্থায় রাখার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি যোগ করেন, গত বছরের জাতিসংঘের জলবায়ু বিশ্লেষণ অনুসারে আগামী এক দশকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দশমিক সেলসিয়াসে গিয়ে দাঁড়াবে। বলা যায় এটা সরাসরি সংঘর্ষের পূর্বাভাস। আগের ইতিহাস পেরিয়ে আমরা দশমিক সেলসিয়াস উষ্ণায়নের দিকে এগোচ্ছি, তারপর সেটা দশমিক সেলসিয়াস অথবা দশমিক সেলসিয়াস হবে। তাই দশমিক সেলসিয়াসে যে স্থিতিস্থাপকতা, আমরা দেখছি তা স্থায়ী হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন