আমদানিতে শ্লথগতি অব্যাহত

জুলাইয়ে গতি ফিরেছে চীনের রফতানিতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সাংহাইয়ের লকডাউন তুলে নেয়ার পর শিথিল হয়েছে সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতাও। অবস্থায় চিরচেনা গতিতে ফিরেছে চীনের রফতানি। যদিও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির আমদানি শ্লথ রয়ে গিয়েছে। এতে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। তবে উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বজুড়ে চাহিদা দুর্বল হয়েছে। ফলে আগামী মাসগুলো চীনা পণ্যের চালান নিম্নমুখী হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত মাসে চীন ৩৩ হাজার ২৯৬ কোটি ডলারের পণ্য পরিষেবা রফতানি করেছে। বিশ্বের শীর্ষ রফতানিকারক দেশটির চালানের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে এটিই সবচেয়ে বড় বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি। এর আগে জুনে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ দশমিক শতাংশ। জুলাইয়ে বিশ্লেষকরা ১৫ শতাংশ রফতানি বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

চলতি বছর চীনা অর্থনীতির জন্য কয়েকটি উজ্জ্বল স্পটগুলোর একটি রফতানি। এর আগে কঠোর কভিডজনিত লকডাউনের কারণে দেশটির ব্যবসা ভোক্তা খাত বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছিল। পাশাপাশি এক সময়ের প্রবৃদ্ধির চালক রিয়েল এস্টেট খাতও গভীর সংকটে ডুবে যাচ্ছে।

পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ জিউয়ে জাং বলেন, চীনের রফতানি অপ্রত্যাশিতভাবে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এটি একটি কঠিন বছরে দেশটির অর্থনীতিকে সহায়তা করে চলেছে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মন্থর হয়েছে।

যা- হোক অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, বিশ্বজুড়ে চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় চীনের চালান বিবর্ণ হবে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত একটি বৈশ্বিক কারখানার ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় উঠে এসেছে, জুলাইয়ে চাহিদা কমে গিয়েছে। এমনকি ক্রয়াদেশ উৎপাদন সূচকগুলো ২০২০ সালের প্রথম দিকে মহামারীর শুরুর পর থেকে দুর্বল পর্যায়ে নেমে গিয়েছে।

চীনের সরকারি জরিপে গত মাসে কারখানার কার্যক্রম সংকুচিত হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। এতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বছরের শুরুর লকডাউনের প্রভাব কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রত্যাশার চেয়ে ধীর অসমতল হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে সৃষ্ট পরিবহন সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাঘাতগুলো সহজ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সময়ে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের শেষের কেনাকাটার চাহিদা মেটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আটটি প্রধান চীনা বন্দরে বৈদেশিক বাণিজ্য কনটেইনার সরবরাহ জুলাইয়ে ১৪ দশমিক শতাংশ বেড়েছে। যেখানে জুনে বাড়ার হার ছিল দশমিক শতাংশ। কভিডজনিত নিষেধাজ্ঞায় ধীর হয়ে পড়া সাংহাই বন্দরে কনটেইনার পরিবহন গত মাসে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

জোনস ল্যাং লাসালে ইনকরপোরেটেডের প্রধান অর্থনীতিবিদ গবেষণা প্রধান ব্রুস প্যাং একটি গবেষণা নোটে বলেন, জুলাইয়ে রফতানি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চাহিদার কারণেও বাড়তে পারে। কারণ সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা সহজ হয়েছে এবং অঞ্চলটির কারখানাগুলো উৎপাদন বাড়িয়েছে।

জিক্সিন ইনভেস্টমেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক চ্যাং র্যান বলেন, চীনের রফতানি বৃদ্ধিতে পণ্যের উচ্চমূল্য বড় ভূমিকা পালন করেছে। কারণ পরিমাণের হিসাবে জুলাইয়ে রফতানি কমেছে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধের দিকে তাকালে দেশটির রফতানি স্বল্পমেয়াদে স্থিতিস্থাপক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশ্বজুড়ে চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়লে চতুর্থ প্রান্তিকে নিম্নমুখী হতে পারে।

তবে রফতানি ঊর্ধ্বমুখী হলেও আমদানি ধীর রয়ে গিয়েছে। নড়বড়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকের পরে বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চীনের আমদানির গতি বাড়বে। তবে গত মাসে আমদানি আবারো প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল ছিল। এটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। গত মাসে আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেড়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা দশমিক শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। জুলাইয়ে আমদানি আগের মাসের তুলনায় মাত্র শতাংশ বেড়েছে।

সিআইটিআইসি সিকিউরিটিজের একজন গবেষক জু শুজেং বলেন, কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়া সত্ত্বেও উৎপাদন খাতে দুর্বলতার কারণে আমদানি শ্লথ রয়ে গিয়েছে। তাছাড়া নতুন কভিড সংক্রমণের কারণে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

জুলাইয়ে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রেকর্ড ১০ হাজার ১২৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যদিও বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ছিল হাজার কোটি ডলারের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন