উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপে সিঙ্গাপুরে খুচরা বিক্রির গতি মন্থর

বণিক বার্তা ডেস্ক

সিঙ্গাপুরের একটি শপিং মল ছবি: রয়টার্স

২০০৮ সালের পর গত জুনে সিঙ্গাপুরে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ চূড়া ছুঁয়েছে। কারণে দেশটির খুচরা বিক্রির গতিও মন্থর হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বিষয়টি আমলে নিয়ে সতর্ক করে বলছেন, আগামী মাসগুলোয় নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। খবর স্ট্রেইটস টাইমস।

দেশটির পরিসংখ্যান বিভাগের (সিং স্ট্যাট) দেয়া তথ্য অনুসারে, জুনে বছরওয়ারি হিসেবে খুচরা বিক্রি বেড়েছে ১৪ দশমিক শতাংশ। যেখানে মে মাসের বাড়ার গতি ছিল ১৭ দশমিক শতাংশ।

পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে কম। যেখানে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছিলেন, বিক্রি বাড়বে ১৮ দশমিক শতাংশ। তবে যানবাহন বাদ দিলে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক শতাংশ।

মে মাসের সঙ্গে তুলনা করলে জুনে খুচরা বিক্রি দশমিক শতাংশ কমে গিয়েছে। অনেকগুলো বিভাগে মাসভিত্তিক বিক্রি কমেছে। এর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন বেশি দামের অনেক পণ্য রয়েছে। যেমন কম্পিউটার, স্মার্টফোন, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি সরঞ্জাম বিনোদনের সামগ্রী।

ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান আরএইচবির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নাবাস গান বলেছেন, বছরওয়ারি খুচরা বিক্রির বৃদ্ধি ওপর থেকে ভালো খবর মনে হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, বিক্রি বাড়ার হার সংকুচিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে ভোক্তা চাহিদা কমছে।

ব্যাংকটির ধারণা, খুচরা বিক্রির গতি বছরের দ্বিতীয়ার্থে আরো মন্থর হবে এবং শেষ প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতির কারণে সংকোচনের মধ্যে পড়বে। পূর্বাভাস অনুসারে, খুচরা বিক্রি চলতি ২০২২ সালে ১০ শতাংশ বাড়তে পারে, ২০২১ সালে যা ১১ দশক শতাংশ বেড়েছিল।

মাসওয়ারি হিসেবে টানা তিন মাস পর খুচরা বিক্রি নিম্নমুখী হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে ওসিবিসি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ট্রেজারি রিসার্চ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি প্রধান সেলেনা লিং বলেন, ভোক্তারা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বৈশ্বিক আশঙ্কায় আরো বেশি সতর্ক হতে শুরু করেছেন।

এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি বিশ্ব পরিস্থিতির পাশাপাশি আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেন ইউওবির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অ্যালভিন লিউ। তার মতে, জুনে অনেক পরিবার বিদেশে ছুটি কাটাতে গিয়েছে, যার কারণে ব্যয় করেছে কম। তিনি মনে করেন, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় ফর্মুলা ওয়ান নাইট রেসের মতো আয়োজন খুচরা বিক্রিতে একটা গতি আনতে পারে। গত বছরের তুলনায় সামনের মাসগুলোয় বিক্রি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষত জ্বালানি খাদ্য কিনতে বেশি খরচ হতে পারে, যা পরিবারগুলোর বেশির ভাগ আয় খেয়ে ফেলবে তারা অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন খরচ কমাবে।

সিং স্ট্যাট বলছে, বছরওয়ারি হিসেবে জুনে খুচরা বিক্রি বৃদ্ধির কারণ গত বছরের একই সময়ে বিক্রি আরো কম ছিল। তখন নভেল করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের মতো নানা ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে বছরওয়ারি হিসেবে মে মাসে ১৪টি ক্যাটাগরির মধ্যে সাতটির বিক্রি ধীর ছিল। অন্যদিকে জুনে আগের বছরের চেয়ে চারটি ক্যাটাগরিতে বিক্রি কমেছে।

চলতি বছর সুপারমার্কেট হাইপারমার্কেটে বিক্রি কমেছে ১১ দশমিক শতাংশ, যেখানে মিনিমার্ট অন্যান্য দোকানে কমার হার দশমিক শতাংশ। ২০২১ সালের জুনে করোনাজনিত বাড়িতে থাকা বা বাড়ি থেকে কাজের কারণে মুদির চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। বছর মোটরগাড়ির বিক্রি কমেছে ১১ দশমিক শতাংশ। তবে আসবাব গৃহস্থালি সরঞ্জামের পতন দশমিক শতাংশ।

পোশাক জুতার বিক্রি বেড়েছে ৯২ দশমিক শতাংশ। তবে আগের মাসে এটি ছিল ৯৯ দশমিক শতাংশ। জুনে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে বিক্রি বাড়ে ৫৭ দশমিক শতাংশ, মে মাসে ছিল ৭৩ দশমিক শতাংশ। মে মাসে ঘড়ি অলংকারের বিক্রি বেড়েছিল ৬০ দশমিক শতাংশ, জুনে বেড়েছে ৫৩ দশমিক শতাংশ।

বছরওয়ারি হিসেবে জুনে খাদ্য পানীয় সেবার বিক্রি বাড়ে ৫৯ দশমিক শতাংশ, আগের মাসে বৃদ্ধি ছিল ৪০ দশমিক শতাংশ। সামগ্রিকভাবে জুনে আনুমানিক মোট খুচরা বিক্রি ছিল ৩৮০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে অনলাইনে অর্ডার করা হয়েছে ১২ দশমিক শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন